আপৎকালীন ‘সুপার ফুড’ এনসেত

এনসেতকে আফ্রিকা এশিয়ার কলার একটি বিশেষ জাত বলা যেতে পারে। ইথিওপিয়ার উঁচু এলাকায় ব্যাপকভাবে জন্মে এটি। অনেকে বসতবাড়ির আশপাশে ছোটখাটো বাগানও করেন। প্রায় অপরিচিত উদ্ভিদকেই বলা হচ্ছে আপৎকালীন সুপার ফুড! বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবেলায় এটি মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণাও শুরু হয়েছে।

লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের বিজ্ঞানী জেমস বোরেল এনসেত নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি সম্প্রতি রয়টার্সকে বলেন, লোকে বলছে এটা একটা নতুন বিস্ময় ফসল। এনসেত অবিশ্বাস্য রকম সহিষ্ণু। এটি অত্যন্ত খরাসহিষ্ণু বলে মনে করা হয়। আমরা এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করছি।

এনসেত গাছ ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ইথিওপিয়ার উচ্চভূমির প্রায় দুই কোটি মানুষের প্রধান খাবার এটি। রুটি, জাউ বা পুডিং থেকে শুরু করে নির্মাণসামগ্রী, প্যাকেজিং, পশুখাদ্য চিকিৎসার কাজেও এর ব্যবহার করেন তারা।

প্রাচীনকাল থেকেই এনসেত খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হলেও বিষয়টি পশ্চিমের নজরে এসেছে সম্প্রতি। লন্ডনের জনপ্রিয় শেফরা গত নভেম্বরেফুড ফরএভারনামের একটি শোতে উদ্ভিদটির ব্যবহার দেখান। খাদ্যবৈচিত্র্য উৎসাহিত করতেই শোটির আয়োজন করা হয়।

এনসেত কলার খুব কাছাকাছি প্রজাতির একটি উদ্ভিদ হলেও এর কমলা রঙের ফলটি খাওয়া যায় না। ফলে থাকে বুলেট আকৃতির অসংখ্য বিচি। অনেকটা দেশীয় বিচি কলার মতো। তবে খাওয়ার অযোগ্য।

তবে গাছের গোড়া মাটির ভেতরে মূলের স্ফীত অংশটি বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়া হয়। কন্দটির ওজন ১০০ কেজি পর্যন্ত হয়। কন্দটির খোসা ছাড়িয়ে পাল্প বানানো হয়। মাটিতে গর্ত করে সেই পাল্প মাসাধিক সময় পুঁতে রাখা হয়। এতে সেটি গাঁজন প্রক্রিয়ায় ঝরঝরে আটার মতো হয়ে যায়। সেই আটা দিয়ে তৈরি করা হয় রুটি বা চাপাটি। স্থানীয়রা রুটিকে বলেন কচো।

গবেষক বোরেল বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মধ্যে এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এনসেত বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে। তীব্র গরম, খরা, ঘন কুয়াশা এমনকি বরফ শীতল আবহাওয়ার মধ্যেও দিব্যি বেঁচে থাকে। আর খাওয়ার জন্য এনসেত বছরের যেকোনো সময় সংগ্রহ করা যায়।

এর মানে হলো ফসলের দুই মৌসুমের মধ্যবর্তী সময় বা কীটপতঙ্গ রোগের আক্রমণ অথবা খারাপ আবহাওয়ায় ফসল নষ্ট হলে আপৎকালীন খাদ্য হিসেবে উদ্ধার করতে পারে এনসেত। অর্থাৎ এটি অনেকটা ইন্স্যুরেন্স পলিসির মতো। যেমন ধরুন, বছরের ৫২ সপ্তাহের মধ্যে ৫০ সপ্তাহের খাবার মুহূর্তে বিশ্বে মজুদ রয়েছে। কিন্তু বাকি দুই সপ্তাহ মানুষ কী খাবে? রকম পরস্থিতি মোকাবেলায় এনসেত কাজে লাগবে। এটিকে বাফার ক্রপ হিসেবে আবাদ করা যেতে পারে, যাতে সম্ভাব্য সংঘাতকালে কোনো ধরনের ত্রাণ ছাড়াই মানুষ খেয়ে বাঁচতে পারে।

এনসেত ইথিওপিয়ার নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকায়ও জন্মায়। তবে আবাদ করা হয় শুধু ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি অঞ্চলে। ফলে এটি আপৎকালীন খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণার প্রয়োজন আছে। বিজ্ঞানীরা আপাতত এর কয়েকশ জাতের ডিএনএ সিক্যুয়েন্স তৈরি করছেন। তারা আশা করছেন, জাম্বিয়া মালাবির মতো দেশগুলোয় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে এনসেত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

 

জাহাঙ্গীর আলম, সূত্র: আল জাজিরা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন