দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় পর্যাপ্ত অর্থ পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের অর্থ পৌঁছাচ্ছে সবচেয়ে কম। এটি বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও অনেকটা সত্য বলে প্রতীয়মান হয়। আগামী দিনে যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা যায়, অবকাঠামো পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো যায় এবং লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়, উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম দেশের চাহিদার নিরিখে অব্যাহত থাকে, তবে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে এসডিজি-২০৩০-এর যে লক্ষ্য, তা বাংলাদেশ অর্জনের কাছাকাছি যেতে পারবেএটা আশা করা যায়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যোগাযোগ জ্বালানি খাতের পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির কথা। হতদরিদ্রের সংখ্যা কমে আসার চিত্র উৎসাহব্যঞ্জক। উন্নতির নতুন ধাপে পৌঁছতে হলে এখন বিষয়টিতে আরো নজর দিতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকেও আরো বেশি সহায়তা আমরা প্রত্যাশা করি। বাংলাদেশ যদিউন্নতির মডেলহিসেবে গণ্য হয়, তাহলে ধারা অব্যাহত রাখতে দরকার সর্বোচ্চ সহায়তা। তবে এর অপরিহার্য শর্তও কিন্তু সুশাসন। দুর্নীতি, অনিয়ম এখনো বাধা হিসেবে বিরাজ করছে এবং তা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হবে।

যেসব পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেশি, সেখানে দারিদ্র্যের প্রকোপ বেশি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডবহুল অঞ্চলের তুলনায় চর প্রত্যন্ত এলাকায় দারিদ্র্য বেশি। যেখানে শিল্পের বিকাশ ঘটছে না কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘন ঘন ঘটে, সেখানে দরিদ্র মানুষ বেশি। কর্মসংস্থানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। হয় নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকতে হবে কিংবা অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ থাকতে হবে। কেবল কাজের সুযোগ থাকলে হবে না, চলার মতো আয়ও থাকতে হবে। অন্যথায় হতদরিদ্রের সারিতে হবে অবস্থান। দেখা গেছে, বরিশাল রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের মাত্রা বেশি। সুতরাং সাম্প্রতিক দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি এবং অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সুনির্দিষ্ট সামাজিক কর্মসূচি প্রসারের পাশাপাশি কৃষিকাজের সুযোগ মজুরি বৃদ্ধি, কৃষিসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়লেও তা সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকলে কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলে না।

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় অর্থ কেন সবচেয়ে কম পৌঁছে, তার কারণ অনুসন্ধান প্রয়োজন। এখানে বরাদ্দ কম থাকে নাকি দুর্নীতি বেশি, এটি চিহ্নিত হওয়া জরুরি। বিশ্বব্যাংক সরকার বিভিন্ন সময় উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িত এলাকাকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার কথা বললেও সেটি যে কাজে আসেনি এবং কেন কাজ করেনি, তার প্রমাণ মেলে আলোচ্য গবেষণা থেকে। যাদের মাধ্যমে বা যে প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় অর্থ পৌঁছানো হয়, সেটি আরো মসৃণ করা প্রয়োজন। এখানে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নীতি অনুসরণ করতে হবে। তদারকি জোরদারের পাশাপাশি বরাদ্দ আরো বাড়ানো যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি দরকার দরিদ্র জনগণের একটি শক্তিশালী পরিপূর্ণ ডাটাবেজ। এতে প্রতিটি ব্যক্তিকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করে সহায়তা দেয়া সহজ হবে। আলোচ্য জরিপটি সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আরো প্রসারিত করবে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার সমৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে সত্য, সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত সমৃদ্ধ অঞ্চলে বরাদ্দ কমিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে।

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় পরিচালিত প্রকল্পগুলোর পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সুবিধাভোগী তার ফল নিয়ে গবেষকরা প্রশ্ন তুলছেন। বিশ্বব্যাংক পরিচালিত প্রকল্পের অর্থ সঠিকভাবে না পৌঁছানোর বিষয়টি অবশ্যই দুশ্চিন্তার। যে প্রক্রিয়ায় বর্তমানে অর্থ দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় যাচ্ছে, সেটি যে সঠিক পথ নয়, তা এরই মধ্যে প্রমাণিত। এখানে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমান সময় আগামীর চাহিদার আলোকে প্রকল্পগুলো সাজাতে হবে। অর্থ কীভাবে ব্যয় করলে দরিদ্ররা সর্বোচ্চ উপযোগ লাভ করবে, সে অনুযায়ী প্রকল্প নকশা করা দরকার। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আগামীতে বরাদ্দ প্রদানে দরিদ্র অঞ্চলকে প্রাধান্য দেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন