প্রাসাদ ছেড়ে কানাডাই কেন হ্যারি-মেগানের পছন্দ

বণিক বার্তা অনলাইন

ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি এবং ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল গত বুধবার রাজপরিবারের সবাইকে হতবাক করে দিয়ে ‘রয়্যাল সিনিয়র মেম্বার’ মর্যাদা ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন। কানাঘুষা চলছে, ব্রিটেন ছেড়ে কানাডায় নতুন সংসার পাতবেন তারা। অবশ্য স্থায়ীভাবে তারা ব্রিটেন ছাড়ছেন না। বছরে ছয় মাস কানাডায় থাকতে পারেন। 

ছয় সপ্তাহ বড় দিনের ছুটি কাটিয়ে দেশে এসে ৮ জানুয়ারি ইনস্টাগ্রামে এ ঘোষণা দেন তারা। দুই জায়গায় থাকাকে এ দম্পতি তাদের একমাত্র সন্তান আর্চির জন্য ‘ভূতাত্ত্বিক ভারসাম্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। যাতে ছেলে রাজকীয় ঐতিহ্যের পাশাপাশি সাধারণের চর্চার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।

বিশ্বে এতো দেশ থাকতে উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা কেন তাদের প্রথম পছন্দ! মেগানের জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রও তো পছন্দের তালিকায় থাকতে পারতো।

কানডার এক বাসিন্দা বলেন, হ্যারি আর মেগানের সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল এখানে। অনেক সুন্দর মুহূর্ত তারা এখানে কাটিয়েছেন। হয়ত এজন্যই কানাডার মায়ায় জড়িয়ে আছেন তারা। তার কথায় যুক্তি আছে। বাকিংহাম প্যালেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পুত্র আর্চিকে নিয়ে কানাডায় ছয় সপ্তাহের বড়দিনের ছুটি কাটিয়ে আসেন হ্যারি ও মেগান। তখন থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভাসা ভাসা কিছু খবর আসে এই দম্পতির কানাডায় বসবাস নিয়ে।

মেগান আমেরিকান হলেও কানাডার সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ পুরনো। জনপ্রিয় মার্কিন টিভি সিরিয়াল ‘স্যুটস’ এর অভিনেত্রী মেগান মার্কেল অভিনয় জীবনের ছয় বছর কাটিয়েছেন টরন্টোর সিটোন গ্রামের বাড়িতে। এ বাড়িতেই নিয়মিত যেতেন প্রিন্স হ্যারি। ওই স্মৃতি রোমন্থনের বাসনা থেকে কানাডায় ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখাটা দোষের কিছু না। কানাডা কমনওয়েলথের অংশ হওয়াতে এখানে অভিবাসন তাদের জন্য সহজতর হতে পারে। নাগরিক না হলেও বছরের ছয় মাস তিনি কানাডায় অবস্থান করতে পারবেন। এমনকি প্রয়োজনে ভিসার সময় বৃদ্ধির আবেদনও করতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রে মেগানও এমন সুবিধা পাবেন। 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ব্যক্তির বিশেষ উপাধি স্বীকৃত নয়। সেক্ষেত্রে নাগরিকত্ব নিতে হলে প্রিন্স হ্যারিকে তার রাজপরিবারের উপাধি পরিত্যাগ করতে হবে। এমনকি মেগান বৈবাহিক সূত্রে যে উপাধি পেয়েছেন, সেটাও বর্জন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের জন্য আইনি প্রক্রিয়া একটু সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। 

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তো প্রস্তুত আছেন তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে। তিনি টুইট করে এ দম্পতিকে তার দেশে স্বাগত জানিয়েছেন। দেশটির বাসিন্দাদের মধ্যেও তাদের আগমন নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কফি-অ্যান্ড-ডনটস ফ্র্যাঞ্চাইজি টিম হর্টনস তো তাদের আজীবনের জন্য বিনামূল্যে কফি খাওয়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বসেছে। এক জরিপে ৬০ শতাংশ কানাডিয়ান হ্যারিকে গভর্নর জেনারেল হিসেবে মেনে নিতে রাজি।

কানাডাতে মেগানের প্রচুর বন্ধুবান্ধবও আছে। জানা যায়, গত বড় দিনের ছুটিতে কানাডায় মিউজিশিয়ান ডেভিড ফস্টার তার এক বন্ধুর এস্টেটে এ দম্পতির ছুটি কাটানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ফস্টারের স্ত্রী ক্যাথেরিন ম্যাকফি লস অ্যাঞ্জেলেসে সেকেন্ডারি স্কুলে মেগানের সহপাঠী ছিলেন।  এছাড়া মেগানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বান্ধবী জেসিনা মালরনি থাকেন টরন্টোতে। তার স্বামী বেন মালরনি কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। তিন শিশুসহ হ্যারি-মেগানের বিয়েতেও আমন্ত্রিত ছিলেন তরা। ধারণা করা হচ্ছে,  আর্চিকে ওই পরিবারের কাছে রেখেই তারা দেশের ফিরেছেন।

দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ককে ২০১৮ সালের মে মাসে পরিণয়ে রূপ দেন হ্যারি ও মেগান। বিয়ের এক বছরের মাথায় ছেলে আর্চির জন্ম। এই দম্পতিকে নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে অনেক নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ে, ভিনদেশী এবং গায়ের রঙ নিয়ে নানা কথা শুনতে হয়েছে মেগান মার্কেলকে। এজন্য অনেকের বিশ্বাস, হ্যারির প্রতি যুক্তরাজ্যের ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর অব্যাহত হয়রানিমূলক আচরণ তার এই সিদ্ধান্তের কারণ। এদিক দিয়েও কানাডা তাদের পছন্দনীয়। যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো পাপারাজ্জিদের তেমন উৎপাত নেই এদেশে। সেলিব্রেটিরাও এদেশে সচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন। বড়দিনের অবকাশযাপনের কথাই ধরা যাক; ছয় সপ্তাহে এই দম্পত্তির একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়নি মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে।

গত বুধবার তারা রাজকীয় দায়িত্ব কমিয়ে এনে নতুন জীবন শুরুর ঘোষণা দেন মেগান ও প্রিন্স হ্যারি। তারা উত্তর আমেরিকায় আরও বেশি সময় কাটানোর এবং আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। হ্যারি ও মেগান কেন রাজপরিবারের আরাম-আয়েশি জীবন ছেড়ে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দিচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, তারা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারেন। ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তাভাবনাও আছে তাদের।

অবশ্য কানাডায় অভিবাসন নেয়া রাজ পরিবারের বেশ পুরাতন ঐতিহ্য। প্রিন্স হ্যারির চাচা প্রিন্স অ্যান্ড্রু কানাডার লেকফিল্ড কলেজ স্কুলে ছয় মাস ছিলেন। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সব সময়ই যোগাযোগ রেখেছেন তিনি। রানী ভিক্টোরিয়ার নাতনী প্রিন্সেস প্যাট্রিসিয়া অব কনাট তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন কানাডায় ছিলেন। প্যাট্রিসিয়ার বাবা প্রিন্স আর্থার ছিলেন কানাডার গভর্নর জেনারেল। প্রিন্সেস প্যাট্রিসিয়া এতোটাই আদরনীয় ছিলেন যে ১৯১৭ সালে তার পোরট্রেটসহ এক কানাডিয়ান ডলারের ব্যাংক নোট ছাপা হয়।

প্রকৃতপক্ষে ১৯৫২ সালের আগে পর্যন্ত কানাডার গভর্নর জেনারেলদের সবাই ব্রিটিশ আভিজাত্যের অংশ ছিলেন। অনেকে ধারণা করছেন প্রিন্স হ্যারি সে ঐতিহ্যই এগিয়ে নেবেন। 

পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে আলোচনা না করেই  হ্যারি - মেগানের এমন সিদ্ধান্তে রীতিমতো হতাশ ও আহত হয় রাজপরিবার। তবে বলা হচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরেই তারা বিষয়টি নিয়ে যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আলোচনার জন্য রানীর সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন। কিন্তু বড়দিনের আগে সেই সাক্ষাৎ না পেয়ে তারা অবকাশ কাটাতে কানাডা চলে যান এবং সেখানে বসেই তাদের সিদ্ধান্ত জনসমক্ষে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন।  

এদিকে হ্যারিকে আজ সোমবার এক জরুরি পারিবারিক বৈঠকে তলব করেছেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। পূর্ব ইংল্যান্ডের নোরফোকে স্যানড্রিংহাম এস্টেটে আয়োজিত এ বৈঠকে হ্যারির বাবা প্রিন্স চার্লস এবং ভাই প্রিন্স উইলিয়ামও উপস্থিত থাকবেন। কানাডা থেকে ফোনে হ্যারির স্ত্রী মেগানও অংশ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন