উড়োজাহাজে দাঁড়িয়ে ভ্রমণের উদ্যোগ এগোলো কতোটা

উড়োজাহাজে উল্লম্ব আসন বা দাঁড়ানো আসনের ধারণা খুব সাম্প্রতিক । ২০০৩ সালে এয়ারবাস প্রথম এমন আসনের একটি ধারণা দেয়। বিশেষ করে এশীয় এয়ারলাইনসগুলোর জন্য এমন আসনের ব্যবস্থার কথা তারা প্রস্তাব করেছিল। ২০০৬ সালে এ নিয়ে প্রচারেও নামে এয়ারবাস। আয়্যাল্যান্ডের রায়ানএয়ার এবং চীনের স্প্রিং এয়ারলাইনস ২০১০ সালের দিকে এ ধারণাটির ব্যাপক প্রচার প্রচারণা শুরু করে। তবে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ চলাচল কর্তৃপক্ষগুলোর অনুমোদন না পাওয়ায় ধারণাটি আজো আলোর মুখ দেখল না।

২০১০ সালে রাশিয়ার একটি স্থানীয় উড়োজাহাজ কোম্পানি তাদের চার্টার্ড ফ্লাইটে দাঁড়ানো যাত্রী বহন করেছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস করাচি থেকে সৌদি আরব সাত জন দাঁড়ানো যাত্রী বহন করার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। তবে উড়োজাহাজের উল্লম্ব বা দাঁড়ানো আসনের ধারণাটি কিন্তু মোটেও এরকম কিছু নয়!

উড়োজাহাজের দাঁড়ানো আসনের একটি নকশা গত বছরের জুনে জার্মানির হামবুর্গে আয়োজিত একটি এক্সপোতে  প্রদর্শন করা হয়। উড়োজাহাজের অন্দরসজ্জার একটি কোম্পানি দাঁড়িয়ে যাওয়ার আসনের প্রোটোটাইপ দেখায়। তারা এর নাম দিয়েছে স্কাইরাইডার ৩.০। অর্থাৎ এটি তাদের এ ধরনের আসন ডিজাইনের তৃতীয় সংস্করণ। মূলত সুলভে বিমানযাত্রার জন্য এমন আসন ডিজাইনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ধরনের আসন ডিজাইন করা গেলে বিদ্যমান ধারণাক্ষমতা ৪১ শতাংশ বাড়বে বা ৪০-৫০ জন বেশি যাত্রী নেয়া যাবে বলে দাবি করা হয়। 

প্রদর্শনীতে দেখানো স্কাইরাইডার ৩.০

এ যাবত একাধিক কোম্পানি দাঁড়ানো আসনের নকশা দিয়েছে। কিন্তু একটিও এখন পর্যন্ত কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল প্রশাসনের আসন ডিজাইনের ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই। তবে কানাডার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এটি অনুমোদন করে না। 

২০০৬ সালে এয়ারবাস এ ধরনের ব্যবস্থা সম্পর্কে যাত্রীদের মনোভাব বুঝতে একটি জরিপ করেছিল। ২০০৩ সালের ডিজাইনটিই দেখিয়েছিল তারা। ২০১০ সালে রায়ানএয়ার একটি উল্লম্ব আসনের ডিজাইন প্রকাশ করে। তবে ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি  এবং ইউকে সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি এ ডিজাইনের লাইনেন্স প্রাপ্তির উপযুক্ততা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। ২০১১-১২ সালের মধ্যে এ ধরনের আসন সম্বলিত আকাশভ্রমণ সেবা চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল রায়ানএয়ার। অস্ট্রেলিয়ার টাইগার এয়ারওয়েজ বলেছিল তারা রায়ানএয়ারের ডিজাইনটি নিয়ে কাজ করবে। 

তবে বোয়িং এরই মধ্যে এ ধরনের ধারণা বাতিল করে দিয়েছে। মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানিটি মনে করে, এ ধরনের ব্যবস্থায় ১৬জি আসনসজ্জার বিধি লঙ্ঘিত হবে। মূলত দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এ মানের আসনসজ্জা ব্যবহার করা হয়।

বসা ও দাঁড়ানো আসনের তুলনামূলক চিত্র

যুক্তরাজ্যের উড়োজাহাজ চলাচল আইন অনুযায়ী, উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়নের সময় যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক। ফলে দাঁড়ানো আসনের উড়োজাহাজ এদেশে অবতরণ করাতে চাইলে আইনি জটিলতায় পড়তে পারে। 

রায়ানএয়ারের ডিজাইনের আসনগুলো এমন যে যাত্রীকে অনেকটা একটি সরু খাড়া তাকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখার মতো। যাত্রীর শরীরের পুরো ভর পায়ের ওপরই থাকবে, আসনের উপর পিঠ ঠেকানো যাবে। যাত্রীকে যেন বেঁধে রাখার মতো একটি ব্যবস্থা এটি। আর ঘাড় ও মাথা রোলারকোস্টারের আসনের মতো করে ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। গত বছর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত এক্সিবিশনে এভিওইন্টারিওর্সের প্রদর্শিত স্কাইরাইডার মডেলটি রায়ানএয়ারের এ ডিজাইনের মতোই। তাছাড়া এ ইকোনমি শ্রেণির জন্য আলাদা কেবিন রাখার কথা বলা হয়েছে।

২০১৫ সালে চীনা বাজেট এয়ারলাইন স্প্রিং এয়ারলাইনস উল্লম্ব আসন ব্যবহারে আগ্রহ দেখায়। ২০১৮ সালে ইতালীয় কোম্পানি এভিওইন্টারিওর্স তাদের প্রথম উল্লম্ব আসনের ডিজাইন প্রকাশ করে।

নিরাপত্তা প্রশ্নে নানা আইনি জটিলতার কারণে দাঁড়িয়ে আকাশভ্রমণের ধারণাটি আলোর মুখ না দেখলেও এ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা থেমে নেই। তাছাড়া মানুষের আকাশভ্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি এয়ারলাইনসের সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। ফলে সস্তায় যাত্রীসেবা দিতে সবাইকে কম খরচে বেশি যাত্রী পরিবহনের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে। দাঁড়ানো যাত্রী নিতে পারলে দুই উদ্দেশ্যই হাসিল হবে। আশা করা যায়, তৃতীয় বিশ্বের মানুষের জন্য শিগগিরই সস্তায় দাঁড়িয়ে আকাশভ্রমণের সুযোগ আসবে।

সূত্র: উইকিপিডিয়া, ডেইলি মেইল, ইন্ডিয়া টুডে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন