‘আমাদের প্রাচুর্যের গল্প বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই’

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র লেটার টু গড নির্মাণ করে বহু প্রান্ত থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন নবীন নির্মাতা হেমন্ত সাদীক। এবার তিনি উদ্যোগী হয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, সমাজ সংস্কারক মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ইতালিয়ান নাগরিক ফাদার মারিনো রিগানের ঘটনাবহুল জীবন আখ্যান তিনি তুলে ধরবেন তার ছবিতে। ছবিটির অভিনেতা-অভিনেত্রী, লোকেশন নির্বাচন সহপ্রযোজকদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে সম্প্রতি ইতালি গিয়েছিলেন সাদীক। দেশে ফিরে সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরলেন রুবেল পারভেজ-এর কাছে

দ্য ফাদার: অ্যান্ড আনটোল্ড স্টোরি ছবির অভিনেতা নির্বাচনের জন্য কিছুদিন আগে ইতালিতে অডিশন নিয়েছেন। সেখানে কেমন সাড়া পেয়েছেন?

ইতালিতে প্রত্যাশার চেয়েও দ্বিগুণ সাড়া পেয়েছি। আমরা ভাবতে পারিনি, এভাবে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এত সংখ্যক প্রার্থী আসবে ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে। মানুষের আগ্রহের বিষয়টি ছিল একেবারেই প্রত্যাশার বাইরে। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল দুদিনে অডিশন শেষ করব। কিন্তু এত বেশিসংখ্যক প্রার্থী আসার কারণে তা বাড়িয়ে চারদিন করতে হয়েছে। খুবই অবাক হয়েছি, ইতালির একেবারে দূর প্রান্ত থেকেও অডিশনে অংশ নিতে মানুষ এসেছিল। এমনও হয়েছে অডিশনে একজন থিয়েটারকর্মী মা তার সন্তানকে নিয়ে এসেছেন ফাদার রিগানের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করানোর ইচ্ছা থেকে। বিষয়গুলো আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে।


ইতালিতে ছবির অডিশন

মানুষের আগ্রহ দেখে তরুণ নির্মাতা হিসেবে কোনো চাপ অনুভব করছেন?

সত্যিই মানুষের এত আগ্রহের বিষয়টি আমাকে খুব চাপে ফেলে দিয়েছে। তাছাড়া ফাদার রিগানকে আমাদের দেশে একভাবে চর্চা করা হয়, অন্যদিকে ইতালির পাঠ্যবইয়ে তাকে পড়ানো হয়। সে কারণে ওখানকার সবাই তার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। মোট কথা, ইতালির জনগণের মধ্যে রিগানের যে উপস্থিতি, তা আমাকে ছবিটি নির্মাণ নিয়ে আরো বেশি ভাবিয়ে তুলেছে।

ফাদার রিগানের চরিত্রের জন্য কেমন পরিকল্পনা আপনাদের?

শুরু থেকেই তার চরিত্রটিকে আমরা ফোকাসে রাখার চেষ্টা করছি। যদিও দীর্ঘ অডিশন রাউন্ডে ফাদার রিগানের চরিত্রের জন্য এখনো আমাদের কাঙ্ক্ষিত অভিনেতাকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আসলে তার চরিত্রটি নিয়ে আমরা এখন খানিকটা ধন্দের মধ্যে পড়ে গেছি। কারণ তার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এত বেশি প্রার্থীর মুখোমুখি হয়েছি যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণে ভাবছি পাঁচজনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তারপর আরেকবার ইতালিতে গিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

অডিশন দিয়েছেন সব বয়সীরাই

 

কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান ছবির গল্প লিখেছেন। বিষয়ে বলুন।

গল্পের যথার্থতা অক্ষুণ্ন রাখতে শাহাদুজ্জামান খুবই ধৈর্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। গল্প লিখতে লিখতে তিনি যখন দেখছেন মনের মতো হচ্ছে না, তত্ক্ষণাৎ থামিয়ে দিয়ে আবার লেখা শুরু করছেন। তার প্রতি অবিশ্বাস্য রকম আস্থা আমাদের। ছবিটির প্রতি তার আগ্রহ আমাদের আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে যে হয়তো তার শক্তিশালী স্ক্রিপ্টের কারণে ছবিটিকে অন্য রকম জায়গায় নিয়ে যেতে পারব।


ছবির প্রি-প্রডাকশনের ব্যাপারটা কতদূর এগোল?

আমি মুহূর্তে বেশি ফোকাসে রাখছি ইতালির অংশকে। ওখানকার কাজ শেষ করে বাংলাদেশ অংশের কাজ শুরু করব। তাছাড়া বাংলাদেশের অংশটা একটু দীর্ঘ সময় নিয়ে করতে হবে। কারণ ফাদার রিগান তার জীবনের ৪০ বছর এখানে অবস্থান করেছেন। তা বড় পরিসরে তুলে আনতে হবে। লক্ষ্যে শিগগিরই মোংলা বাগেরহাটে যাব। সবকিছু গুছিয়ে আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে শুটিং শুরুর ইচ্ছা আছে।

 

শিশু নির্মাতা পরিচয়ের পর এখন তরুণ নির্মাতা হিসেবে প্রথমবারের মতো পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি বানাচ্ছেন, বিষয়টি নিয়ে কেমন বোধ করছেন?

শিশু নির্মাতা হিসেবে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ করার মানেই হলো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া। এটাই তো স্বপ্ন ছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে চেয়েছিলাম, আরো একটু সময় নিয়ে কাজ শুরু করব। কিন্তু কাজটি হাতের নাগালে এসে যাওয়ায় সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রণা পেয়েছি।

 

প্রথম ছবির বিষয়বস্তু হিসেবে ফাদার রিগান আপনার কাছে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো?

শুরু থেকেই একটা বোধ কাজ করেছিল আমার ভেতর যে এমন একটা গল্প বলব, যার প্রয়োজনীয়তা সময়ে সমাজের জন্য খুব বেশি। ফাদার রিগান এমন একজন মানুষ, তিনি এমনভাবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন, যা গ্লোবালি প্রভাব রাখতে পারে। সেখান থেকেই তাকে নিয়ে একটি গল্প বলার আগ্রহ তৈরি হয়েছে আমার। আমার কাছে মনে হয়, প্রায় অন্ধভাবে আমরা পাশ্চাত্যের সবকিছু অনুকরণ করি। বিপরীতে সেখানে রিগান একজন পাশ্চাত্যের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও সব বিলাসিতা ছেড়ে বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলেন। তিনি এখানে এসে একটা হাসপাতাল বানিয়েছিলেন। হাসপাতালে কোনো নতুন শিশু জন্ম নিলে তিনি শিশুর মা-বাবাকে প্রশ্ন করতেন, তোমাদের সন্তানকে কী বানাতে চাও? তারা বলত, আমরা আমাদের সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ বানাতে চাই। বিষয়টি নাকি তাকে খুব আশ্চর্যিত করত। এছাড়া তিনি রবীন্দ্রনাথের বেশকিছু বই অনুবাদ করেছেন। লালনকে নিজের ভেতরে লালন করেছেন। প্রাচ্যের দার্শনিক অবস্থান তাকে গভীরভাবে টেনেছে। রিগান এখানে যে প্রাচুর্য খুঁজে পেয়েছিলেন, সেই প্রাচুর্যকে একটু গ্লোবালি দেখাতে চাচ্ছি। এতে  আমাদের আত্মপরিচয়ও শক্তিশালী হয়। বেশির ভাগ ছবিতেই আমাদের দারিদ্র্য বেশি উঠে আসে। অথচ দারিদ্র্যের বাইরেও আমাদের আরেক ধরনের প্রাচুর্যের গল্প আছে। আমি আমাদের সেই প্রাচুর্যের গল্পকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই।

 


ছবিটি নিয়ে দর্শকের প্রত্যাশা কেমন থাকতে পারে?

এটা বলা মুশকিল। তবে এতটুকু কথা দিতে পারি, আমি আমার সর্বোচ্চ সততা দিয়ে এর পেছনে শ্রম দেয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি, অন্তত এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক দিক পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন