ভারতে ম্যালওয়্যার আক্রমণ বেড়েছে ৪৮%

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে ক্ষতিকর অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রতারণামূলক আক্রমণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে শুধু ভারতীয় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে ১৪ কোটি ৬০ লাখবারফ্রড অ্যাটাকবা প্রতারণামূলক ম্যালওয়্যার আক্রমণ চালানো হয়ছে, যা এক বছর আগের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি। ভারতভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান কুইক হিল টেকনোলজিসের এন্টারপ্রাইজ বিভাগসিকিরাইট’-এর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের উৎপাদন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্স্যুরেন্স, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আইটি আইটিইএস এবং বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় সবচেয়ে বেশি আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। গত বছর ভারতে যত সংখ্যক ম্যালওয়্যার আক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে, তার ২৩ শতাংশসিগনেচারলেস বিহেভিয়ার-বেসডহিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ দেশটিতে চালানো ম্যালওয়্যার আক্রমণের এক-চতুর্থাংশ নতুন আঙ্গিকের কিংবা এর আগে কখনো ধরনের ম্যালওয়্যার থ্রেট চিহ্নিত করা হয়নি। থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, সাইবার অপরাধীরা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কৌশল টুল ব্যবহার করে ম্যালওয়্যার আক্রমণ চালাচ্ছে।

বিষয়ে কুইক হিল টেকনোলজিসের যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) সঞ্জয় কাটকার বলেন, বিভিন্ন খাতের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (সিআইও), প্রধান তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা (সিআইএসও), ব্যবসায় নেতৃত্বদানকারী এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান অংশীদারদের ম্যালওয়্যার থ্রেট সম্পর্কে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে এবং ক্রমবর্ধমান নতুন থ্রেট সম্পর্কে আগাম জানতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে প্রতারণামূলক আক্রমণ ঠেকাতে কাজ করছে। তারা নিত্যনতুন টুল উন্নয়ন করছে এবং সেসব ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিপর্যায়ে ম্যালওয়্যার আক্রমণ ঠেকানোও সম্ভব হচ্ছে। তবে সমস্যা হলো সাইবার নিরাপত্তা গবেষকদের মতো সাইবার অপরাধীরাও বসে নেই। তারাও নিয়মিত নতুন কৌশলে ম্যালওয়্যার আক্রমণ চালাচ্ছে। প্রতারণামূলক আক্রমণ চালাতে নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে এবং সফল হচ্ছে। গত বছর ভারতের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে ম্যালওয়্যার আক্রমণ বৃদ্ধিকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

বিশ্বব্যাপী এখন ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ছে। এন্টারপ্রাইজ বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো আইওটি ডিভাইসের বৃহৎ ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্কে ব্যাপক হারে আইওটি ডিভাইস এবং তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেজ (এপিআই) ব্যবহার বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হওয়ার তথ্য অগোচরে থেকে যাচ্ছে। তবে যখন ম্যালওয়্যার আক্রমণের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি কিংবা তথ্য খোয়ানোর পরিস্থিতিতে পড়ছে, তখন ঘটনাগুলো সামনে আসছে।

গত বছর মে মাসে আরএসএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একই বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ২০১৮ সালের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে প্রতারণামূলক আক্রমণ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। ধরনের আক্রমণ চালানোর দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভারত শীর্ষে।

দ্য ফ্রড অ্যাটাক ট্রেন্ডস: কিউ১ (প্রথম প্রান্তিক) ২০১৯শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতারণামূলক আক্রমণের মধ্যে ২৯ শতাংশইফিশিং আক্রমণছিল। অর্থাৎ মানুষকে মেইল বা নানা অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ডাউনলোডে উৎসাহিত করা হয়। এর মাধ্যমে অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে সাইবার অপরাধীরা।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যে, ফিশিং শুধু অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা নয়; নানা ভুয়া লিংক, বার্তা, অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তি সাইটের অনুকরণ করে ধরনের আক্রমণ চালানো হয়। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফিশিং আক্রমণের হার শতাংশ বেড়ে যাওয়ার তথ্য দেয়া হয়েছে। এখন ক্ষতিকর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফিশিং আক্রমণ আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরএসএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইবার প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত থাকতে সেকেলে ইউজার নেম পাসওয়ার্ড এখন আর যথেষ্ট নয়। একাধিক স্তরের অথেনটিকেশন প্রক্রিয়া চালু করে ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং প্রতারণামূলক আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন