দাবানলে পুড়ে অঙ্গার গাছ থেকে বেরুচ্ছে কুঁড়ি!

বণিক বার্তা অনলাইন

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দাবানলে অস্ট্রেলিয়ায় ভস্মীভূত হয়েছে অগণিত গাছগাছালি, লাখ লাখ হেক্টর জমি, মারা গেছে কোটি কোটি বন্যপ্রাণি ও ২৪ জন মানুষ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে স্বস্তি এনেছে সবুজের আগমন। পুড়ে অঙ্গার হওয়া বনভূমিতে ছাইয়ের মধ্যে হাসছে নতুন কুঁড়ি! 

নিউ সাউথ ওয়েলশের একজন শখের আলোকচিত্রীর তোলা ছবিতে দেখা যায়, ছাইয়ের ভেতর থেকে জন্মেছে ঘাস ও গাছের চারা, আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া গাছের গা ফুঁড়ে বের হয়েছে নতুন কুঁড়ি। জানা যায়, ছবিগুলো তোলেন অবসরপ্রাপ্ত পরিবহণ পরিদর্শক মারে লো (৭১)। ছবিগুলো এতোটাই আবেদন তৈরি করেছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে কয়েক হাজারবার শেয়ার হয়েছে। এর মাধ্যমে আশার অঙ্কুরোদগম হয়েছে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত ভীতসন্ত্রস্ত হাজারো মানুষের মনেও। 

নিউ সাউথ ওয়েলশের উপকূলের কুলনুরায় বাড়ির কাছে দাবানল কতোটা ক্ষতি করেছে তা দেখতে গিয়ে পথিমধ্যে এই আশা জাগানিয়া ছবিগুলো সেলফোনে তোলেন মারে লো। কুলনুরার মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে তিনি ধুরাগ জাতীয় উদ্যানের কিনারায় এসে থামেন। এখানে একটি ছোট জনগোষ্ঠী আগুনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে। দাবানলের কারণে ১৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর এলাকার পার্কটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে এ এলাকায় দাবানল হানা দেয়। সেখানে এখন ছাইয়ের ভেতর থেকে গজাতে শুরু করেছে চারা।

এমনভাবে পুড়ে যাওয়ার পরও কীভাবে নতুন কুঁড়ি গজাচ্ছে? লোর ছবিগুলো নেটিজেনদেরও ধন্দে ফেলেছে। তবে এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফায়ার ইকোলজি বিশেষজ্ঞ ড. কিমবারলে সিম্পসন। তার কথায়, এই পুনর্জন্ম খুবই স্বাভাবিক। এই উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোর কয়েক লাখ বছর ধরে আগুনে পোড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে এরকম পরিস্থিতিতে প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে তারা প্রয়োজনীয় বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। দুই প্রক্রিয়ায় গাছগুলোর পুনর্জন্ম হয়: 

প্রথমত দাবানলেও কুঁড়ি টিকে থাকে এমন প্রজাতির উদ্ভিদ। লোর ছবিতে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইউক্যালিপটাসের বেশিরভাগ প্রজাতিসহ অস্ট্রেলীয় অনেক প্রজাতির গাছে থাকে এপিকর্মিক্স বাড বা সুপ্ত কুঁড়ি। এসব কুঁড়ি গাছের পুরু বা মোটা বাকলের নিচে বেশ গভীরে থাকে। ফলে দাবানলের সময় আগুনের তীব্র তাপ থেকে নিরাপদ থাকে। একইভাবে অনেক গুল্ম এবং ঘাস মাটির অনেক গভীরে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। ফলে তারা স্বাভাবিক পরিবেশ পেলে দ্রুত গজাতে পারে।

আর দ্বিতীয় উপায় হলো: কিছু উদ্ভিদ প্রজাতির বীজ তাপ-প্রতিরোধী। ফলে প্রচণ্ড তাপেও অক্ষত থাকা বীজ থেকে পরে চারা গজায়।  ডা. সিম্পসন বলেন, দাবানলের পর সাধারণত ছোট চারার জন্য খুবই উপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কারণ ছাই থেকে প্রচুর পরিমাণে আলো এবং পুষ্টির নিঃসরণ ঘটে। এ কারণে অগ্নিকাণ্ডের পর মাটি থেকে দ্রুত চারা গজানোর ঘটনা খুব স্বাভাবিক। তবে লোর ছবিতে এ তত্ত্বের সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এ ধরনের বীজ থেকে চারা গজাতে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। কিন্তু কুলনারাতে বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়নি। 

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন