আবরার হত্যায় ৪ পলাতক আসামির একজনের আত্মসমর্পণ

আদালত প্রতিবেদক

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলায় পলাতক আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা ওই আসমির জামিন জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিন সকালে আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইমরুল ইসলামের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি দাবি করেন, আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর হত্যার পরিকল্পনার মিটিং এ উপস্থিত থাকা। কিন্তু আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ঘটনার আগে ওই বছর ২৯ সেপ্টেম্বর গ্রামের বাড়ী চাপাইনবাবগঞ্জে যান। সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি একটি দলিলের সাক্ষী হন। এরপর ৩ অক্টোবর সেখানে পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন জমা দেন এবং ৪ অক্টোবর একটি সংগঠন থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এরপর ৬ অক্টোবর সকালের ট্রেনে ঢাকায় এসে বিকেলে বুয়েটের হলে পৌঁছান। 

সেই হিসেবে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত তার অবস্থান ছিল চাপাইনবাবগঞ্জ। তাই ৫ অক্টোবর বুয়েটে হত্যার পরিকল্পনার মিটিং এ তার উপস্থিতি বক্তব্য সত্য নয়। তাই হত্যা এবং হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাই তিনি জামিন পেতে পারেন। 

অন্যদিকে রাষ্ট্র পক্ষে জিআরও পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম এবং সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামি মোর্শেদ অমর্ত্যকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

এদিকে মামলাটিতে সোমবার পলাতক আসামিদের আদালতে হাজির হতে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য আছে। ওইদিন মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলির আদেশ হতে পারে।

উল্লেখ্য, পলাতক আসামিদের মধ্যে মোর্শেদ আমত্য আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাওয়া এখন আরও তিনজন পলাতক রইলেন। অপর ৩ জন হলেন, বুয়েটের ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক্স বভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মুহাম্মাদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান (২২), বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০) ও বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র মুজতবা রাফিদ (২১)।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান আদালতে দাখিল করেছেন।

কারাগারে থাকা আসামিরা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররেফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, মো. মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদুর রহমান ও এএসএম নাজমুস সাদাত, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইসাতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, শিক্ষার্থী আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শিক্ষার্থী শাসছুল আরেফিন রাফাত, আকাশ হোসেন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা ও এস এম মাহমুদ সেতু। যাদের মধ্যে প্রথম ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তি করেছেন।

উল্লেখ্য, আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলার ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত ৬ অক্টোবর একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়। রাত ৩টার দিকে হল থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন