বাংলাদেশের বিল, হাওড় ও বন্যাপ্রবণ এলাকার ১৬টি জেলায় ব্র্যাকের শিক্ষাতরী
কার্যক্রম চালু রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০১২-১৮ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে ১৪ হাজার
৫০০ জনের বেশি শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছে। তাদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই প্রাথমিক
শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। স্থানীয় জনগণ, শিশু শিক্ষার্থী
এবং সরকারি কর্মকর্তারা এ ধরনের আরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি
রাজধানীর বেঙ্গল ইন এ ব্র্যাক পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত
অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
‘ফ্লোটিং দ্য লাইট অব
এডুকেশন ইন হাওর: ইনোভেটিভ সলিউশনস টু রিমুভ ব্যারিয়ারস টু এডুকেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
দুর্গম এলাকায়
শিক্ষা পৌঁছে দিতে ব্র্যাকের উদ্ভাবনী বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন,
শিক্ষা সরকারের অন্যতম
প্রধান অগ্রাধিকার। আমরা এরই মধ্যে অনেকগুলো মাইলফলক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
দুর্গম হাওড়
অঞ্চলে শিশুশিক্ষা বিস্তারে নৌকাভিত্তিক স্কুলের প্রভাব এবং এক্ষেত্রে বহুমাত্রিক
বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণাটির উদ্দেশ্য বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যেসব এলাকায় শিক্ষাতরী চালু আছে, সেখানকার
বাসিন্দাদের আর্থসামাজিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা, যা সন্তানদের
লেখাপড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। পাশাপাশি শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর বোটস্কুলগুলোর প্রভাব, প্রকল্পটির স্বাধীন মূল্যায়ন এবং এর প্রসারে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো
নিরূপণ করা।
বর্তমানে যেসব
জেলায় শিক্ষাতরী প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে,
সেগুলো হলো পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,
রাঙামাটি, কুমিল্লা,
গোপালগঞ্জ, জামালপুর,
কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ,
নেত্রকোনা, নাটোর,
পাবনা, সিরাজগঞ্জ,
কুড়িগ্রাম, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ। এসব জেলার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম ও
সুবিধাবঞ্চিত এলাকা হাওড় অঞ্চলে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
এ বিষয়ে
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন,
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠালগ্ন
থেকেই এর কার্যক্রমের প্রধানতম ক্ষেত্রগুলোর একটি হলো শিক্ষা। ১৯৭০-এর দশক থেকেই
দেশের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোয় কাজ করতে শুরু করি আমরা। বৈষম্য কমিয়ে আনার
পাশাপাশি যাদের সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন,
তাদের কাছে যেতে হবে।
গবেষণাটি
পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড
ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড.
মাহবুবা নাসরিন। তার
সহযোগী ছিলেন একই ইনস্টিটিউটের প্রভাষক মোহাম্মদ আফওয়া ইসলাম ও মোসাব্বের আলী
চিশতি। বোটস্কুল প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে কাতারভিত্তিক সংস্থা এডুকেশন অ্যাবাভ অল
ফাউন্ডেশনের এডুকেট এ চাইল্ড কর্মসূচি,
যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহায়তায়। ‘শিক্ষার্থী যদি স্কুলে যেতে না পারে, তাহলে স্কুলই তার দোরগোড়ায় চলে আসবে’ এ সরল দর্শন থেকে শিক্ষাতরী প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ
করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শিক্ষা-বিষয়ক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা হান্ড্রেড
পরিচালিত জরিপে বিশ্বের ১০০টি উদ্ভাবনমূলক শিক্ষা প্রকল্পের মধ্যে স্থান পেয়েছে।