ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে ইরাক ও ইরানের আকাশসীমা এড়িয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে এয়ারলাইনগুলোকে। ফলে তাদের গুনতে হচ্ছে উচ্চ জ্বালানি ব্যয়। এদিকে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের উড়োজাহাজের দীর্ঘায়িত গ্রাউন্ডিং নিয়ে এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে এয়ারলাইনগুলো। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি এ খাতে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। খবর রয়টার্স
ইরাকে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরানের মিসাইল হামলার পরই জার্মানির লুফথানসা এজি, এয়ার ফ্রান্স-কেএলএম এসএ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস লিমিটেড ও মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইটের গতিপথ এ অঞ্চলের আকাশসীমা থেকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। এরই মধ্যে ইরানের রাজধানী তেহরানে বিধ্বস্ত হয়েছে ইউক্রেনের এক যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। ফলে সব মিলিয়ে অঞ্চলটির আকাশসীমা ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে এয়ারলাইন সংস্থাগুলো। তবে ইতিহাদ, কাতার ও এমিরেটস এয়ারলাইন এখনো এ আকাশসীমা ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে ইনডিপেনডেন্ট এভিয়েশনের কনসালট্যান্ট জন স্ট্রিকল্যান্ড এক ই-মেইল বার্তায় জানান, ইরাক-ইরানের আকাশসীমা এড়াতে গিয়ে এয়ারলাইনগুলোর দ্বিগুণ সংকট দেখা দিয়েছে। ফ্লাইটের সময় তো দীর্ঘায়িত হচ্ছেই, শিডিউল বিপর্যয়ের পাশাপাশি পরিচালন ব্যয় বাড়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
বৈশ্বিক আকাশসীমার ঝুঁকি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ওপিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জি বলেন, ইরান ও ইরাকের আকাশসীমা এড়াতে গিয়ে ফ্লাইটগুলোর রুট পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় প্রতি যাত্রায় সময় বেশি লাগবে অন্তত ৪০ মিনিট। ফ্লাইটরাডার২৪ এবং এয়ারলাইন সদস্যদের দেয়া উপাত্তের ভিত্তিতে তিনি আরো বলেন, এ পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজগুলো সৌদি আরব ও মিসরের আকাশপথ হয়ে চলাচল করছে।
অস্ট্রেলিয়ার কান্তাস এয়ারওয়েজ বলছে, ভ্রমণপথ পরিবর্তন করলে পার্থ থেকে লন্ডন যেতে প্রতি ফ্লাইটে সময় বেশি লাগতে পারে অন্তত ৫০ মিনিট। ফলে বেশি জ্বালানি নিতে গিয়ে যাত্রী সংখ্যা কমাতে হতে পারে, যা আবশ্যিকভাবে এয়ারলাইনের আয় সংকুচিত করবে। একই ভাবে ভার্জিন আটলান্টিক জানিয়েছে, ভ্রমণপথ পরিবর্তনে ভারতের মুম্বাইয়ে ফ্লাইট পরিচালনায় তাদেরও সময় ও ব্যয় উভয়ই বাড়বে।
এদিকে ইরান, ওমান উপসাগর এবং ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যবর্তী জলসীমার আকাশপথকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। সংস্থাটি এসব পথে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে এ খাতের জন্য খুশির খবর হলো, এত উত্তেজনার মধ্যেও গত বুধবার নাগাদ আগের চার মাসের চেয়ে অয়েল ফিউচার্সে প্রায় ৪ শতাংশ পতন হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় গত শুক্রবার রাতে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের অভিজাত বাহিনী কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন। এরপর থেকেই অঞ্চলটিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। এরপর সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। এসব কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অনিরাপদ বলে মনে করছে এয়ারলাইনগুলো।