শিল্পায়ন ও উৎপাদনমুখী ব্যবসার কারণে দেশে শিল্পনগরীর চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে বিদ্যমান বেশ কয়েকটি শিল্পনগরীতে প্রায় সব প্লটেই গড়ে উঠেছে শিল্প-কারখানা। এর মধ্যে নরসিংদীর কারারচর বিসিক শিল্পনগরীতে ৯৫টি প্লটের একটিও খালি নেই। যদিও স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন প্লটের চাহিদা বাড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ প্রকল্প সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নরসিংদী বিসিকে আরো ১৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিকের সূত্রমতে, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কারারচরে ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরী স্থাপিত হয় ১৫ দশমিক ৩৯ একর জমির ওপর। এতে মোট ৯৫টি প্লট ৫১টি শিল্প ইউনিটকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ শিল্পনগরীতে বর্তমানে চালু শিল্প ইউনিট ৪৩টি, নির্মাণাধীন দুটি এবং নিষ্ক্রিয় রয়েছে ছয়টি। চালু শিল্প ইউনিটগুলোয় কর্মসংস্থান হয়েছে চার হাজারের বেশি লোকের। এ শিল্পনগরীতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহের সুবিধার পাশাপাশি ভালো যোগাযোগ ও আমদানি-রফতানি সুবিধা থাকায় বরাদ্দকৃত প্লট ও ইউনিট দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।
পরে প্লটের ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির সিদ্ধান্তে নরসিংদী জেলা থেকে সাড়ে ১২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিমে শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নে ৩০ একর জমির ওপর ‘নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের
জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নতুন ১৬৮টি প্লট তৈরি হবে, যেখানে ১৫০টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রসারিত নরসিংদী বিসিকের মোট প্লটের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য।
এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের অধীনে ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ৩ লাখ ৩ হাজার ৬০০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। সেখানে অফিস ভবন, পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার, রাস্তা নির্মাণ করা হবে। ড্রেন নির্মাণ করা হবে ৪ হাজার ৪৭০ মিটার। পানি সরবরাহের জন্য নির্মাণ করা হবে ২ হাজার ৫৭৫ মিটার পাইপলাইন। গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে একটি, গ্যাসলাইন স্থাপন করা হবে ২ হাজার ৫০ মিটার। আরো নির্মাণ করা হবে শিল্পনগরীর সীমানাপ্রচীর ও প্রধান ফটক, ডাম্পিং ইয়ার্ড, প্যালাসাইডিং ওয়ার্কস ও বিদ্যুৎ লাইন। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান (ক্যানোপিসহ) ও একটি মোটরসাইকেল কেনা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নুরুল আমিন বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিই বিসিকের লক্ষ্য। নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের পর শিল্প ইউনিটগুলোয় অনেকের কর্মসংস্থান হবে, যা দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) প্রস্তাবিত নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ (১ম সংশোধনী) প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে একনেক অনুমোদন করেছে।
নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৫ সালে। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয় বাড়ে ৪৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুসরণে পূর্তকাজের ব্যয় প্রাক্কলন প্রণয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়নে অত্যাবশ্যকীয় নতুন অঙ্গ (সীমানা দেয়াল, সুপারভিশন ও স্থাপত্য পরামর্শক, বীমা চার্জ, পানির বিল রেজিস্ট্রেশন ফি, আউটসোর্সিং সেবা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্তকরণ, নতুন অর্থনৈতিক কোড অনুযায়ী ডিপিপি প্রণয়ন ও প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির কথা বলা হয়।
