সেই ধোপাদীঘিতেই বহুতল ভবন তুলছে সিসিক

দেবাশীষ দেবু সিলেট

সিলেট নগরীর ধোপাদীঘির সৌন্দর্যবর্ধন ও দখলদারদের উচ্ছেদে ২০১৮ সালে উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ওই সময় উচ্ছেদ করা হয় দীঘি দখল করে গড়ে ওঠা বেশকিছু স্থাপনা। চারদিকে স্থাপনার কারণে প্রায় ঢাকা পড়ে যাওয়া ধোপাদীঘি এ অভিযানের ফলে কিছুটা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, যা প্রশংসা কুড়ায় নগরবাসীর। এবার সেই ধোপাদীঘিতেই বহুতল ভবন নির্মাণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)

গত সোমবারসিলেট সিটি করপোরেশন বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, ধোপাদীঘির পাড় নামে নির্মিতব্য ওই ভবনের নকশাসহ একটি সাইনবোর্ড ধোপাদীঘির পূর্বপাড়ে টানিয়েছে সিসিক। বহুতল ওই বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ফলে ফের ধোপাদীঘি ঢাকা পড়বে এবং সৌন্দর্যহানি ঘটবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ধোপাদীঘির সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ২০১৮ সালে যখন দীঘির মাঝখানে স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তখনো আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। এরপর সিটি মেয়র আমাদের নকশা দেখিয়ে বলেছিলেন, দীঘির মাঝখানে কোনো স্থাপনা হবে না। এর পরে যখন দীঘির আশপাশের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়, আমরা তখন স্বাগত জানিয়েছিলাম।

কিম বলেন, এখন দেখতে পাচ্ছি সেই সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্পের কাজ থেমে আছে। অথচ দীঘিতেই বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরকর্তাদের বুঝতে হবে উন্নয়ন মানেই কেবল স্থাপনা নির্মাণ নয়। জলাশয়, খোলামেলা জায়গারও নগরীতে প্রয়োজন রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় একর আয়তনের ধোপাদীঘি সিলেটের অন্যতম প্রাচীন দীঘি। ওই দীঘির নামেই এ এলাকার নামকরণ হয়েছে ধোপাদীঘির পাড়।  দীঘির পাঁচ একর জায়গার মালিক সিলেট সিটি করপোরেশন। বাকি এক একর ধোপাদের মালিকানায়।

অনেকদিন ধরেই দখলে-দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়ে ধোপাদীঘির বেশির ভাগ অংশ। সিটি করপোরেশনই শিশুপার্কের জন্য এ দীঘির একটি অংশ ইজারা দেয়। দীঘি দখল করে গড়ে ওঠে ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত বঙ্গবীর শিশুপার্ক। দীঘি ভরাট করে মসজিদও নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। এছাড়া এ দীঘির তীর দখল করে গড়ে উঠেছে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড, রেড ক্রিসেন্টের কার্যালয়। চারপাশে নানা স্থাপনার কারণে এ দীঘি প্রায় আড়ালে পড়েছিল। এ অবস্থায় ২০১৮ সালে সিসিকের অভিযানে কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদের পর দীঘিটির একপাশ দৃশ্যমান হয়। তবে উচ্ছেদকৃত ওই এলাকায় এবার নিজেরাই ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের এপ্রিলে অস্তিত্ব সংকটে থাকা ধোপাদীঘির সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।ধোপাদীঘি এরিয়া ফর বেটার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড বিউটিফিকেশন নামে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। এ প্রকল্পে রেস্টুরেন্ট, বহুতল ভবন ও ৫০৬ মিটার পায়ে হাঁটার পথ (্ওয়াকওয়ে) নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। তবে মাঝপথেই আটকে আছে ওই প্রকল্পের কাজ। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বহুতল ভবনের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

সিসিক কর্মকর্তারা জানান, ধোপাদীঘির আকার অনেক বড় থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে আশপাশে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট গড়ে তুলে অনেকে এ দীঘির জায়গাও অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন। কেউ কেউ সিসিকের অনুমতি নিয়েছেন আবার অনেকে অনুমতি না নিয়েই দোকানপাট করছেন। দীঘির পাড়ের সৌন্দর্য রক্ষার্থে ২০১৮ সালেই দীঘির উত্তর-পূর্ব অংশে ১২তলা ভিত্তি দিয়ে অত্যাধুনিক মার্কেট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যারা ধোপাদীঘির পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন, তাদের তালিকা করা হয়েছে। নতুন মার্কেটে তাদেরসহ অন্যদের দোকান ভাড়া দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধোপাদীঘি ও দীঘির পাড় বেদখল ছিল। যে যার মতো দোকানপাট গড়ে তুলেছিলেন। নগরীর মাঝখানে এমন একটি জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে দোকানপাট গড়ে তোলায় ওই এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল। তাই ২০১৮ সালে এখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সম্প্রতি এ মার্কেটের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিছুদিন পর কাজ শুরু হবে।

তিনি আরো বলেন, ধোপাদীঘির পাড়ে এতদিন ধরে যারা ব্যবসা করে আসছেন, তাদের তালিকা করা হয়েছে। নতুন মার্কেটে তাদের দোকান ভাড়া দেয়া হবে। এ মার্কেটটি তৈরি হলে কেউ আর বিচ্ছিন্নভাবে দোকানপাট বসাবেন না। এতে এ এলাকার সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা বাড়বে। পাশাপাশি ধোপাদীঘির সৌন্দর্যবর্ধনের পর পুরো এলাকা অনেক দৃষ্টিনন্দন হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন