‘বাতাস থেকে’ উৎপাদিত ‘সোলিন’ বদলে দেবে খাদ্য উৎপাদনের ভবিষ্যৎ

বণিক বার্তা অনলাইন

‘বাতাস থেকে’ আমিষ জাতীয় খাদ্য তৈরি করেছেন ফিনল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানী। তারা দাবি করছেন, এই খাবার পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন খরচের দিক দিয়ে এক দশকের মধ্যে সয়াবিনের প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারবে। আর এই খাবার উৎপাদনে সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ুকলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা গেলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনও প্রায় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যাবে বলে দাবি করেছেন তারা।

বলা হচ্ছে, এই বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা মতো বাণিজ্যিক উদ্যোগ সম্ভব হলে কৃষির কারণে পরিবেশ বা প্রকৃতিতে বর্তমানে যেসব প্রভাব পড়ছে তা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

বাতাস থেকে আমিষ উৎপাদনের কৌশল সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলছেন, তড়িৎ সংশ্লেষণের মাধ্যমে পানি থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস আলাদা করা হয়। তারপর সেই হাইড্রোজেন, বাতাস থেকে নেয়া কার্বন ডাই অক্সাইড ও খনিজ পদার্থ দিয়ে মাটিতে পাওয়া সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার কালচার করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়ায় কাঙ্ক্ষিত আমিষ তৈরি করে।

বিজ্ঞানীরা এই খাবারের নাম দিয়েছেন ‘সোলিন’। এটি একটি স্বাদহীন আটা। গবেষকরা বলছেন, তারা মূলত এমনটাই (স্বাদহীন) চাচ্ছিলেন। এই আমিষ সরাসরি খাওয়ার জন্য নয় বরং এতে প্রয়োজন মতো রঙ ও স্বাদ যুক্ত করা যাবে। এটি ব্যবহার করা যাবে পাস্তা, আইসক্রিম, বিস্কুট, নুডুলস, সসেজ বা রুটিতে। এমনকি কৃত্রিম মাংস বা মাছ তৈরির মিডিয়াম হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে সোলিন। 

ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরের বাইরে সোলিন উৎপাদনের কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন এই বিজ্ঞানীরা। এটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাসি ভাইনিক্কা। তিনি পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাজ্যের ক্র্যানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে; বর্তমানে ফিনল্যান্ডের ল্যাপপিনরান্টা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন।

সোলিন দেখতে এরকম, বলছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: এএফপি

ভাইনিক্কা বলেন, এমন খাবার উৎপাদন প্রযুক্তির ধারণা প্রথম এসেছে ঊনিশ শতকের ষাটের দশকে। মূলত মহাকাশে এমন প্রযুক্তিতে খাবার তৈরির ধারণা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে তিনি এটাও স্বীকার করছেন যে, তারা এখনো বেশ পিছিয়ে আছেন। তিনি আশা করছেন, আগামী দুইএক বছরের মধ্যে তাদের গবেষণা সম্পন্ন হবে। এরপর তারা বাণিজ্যিকভিত্তিতে উৎপাদনে পথে হাঁটবেন। এই প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে ৫৫ লাখ ইউরো বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।

এই গবেষক বলছেন, সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ বাণিজ্যিকভাবে এই খাদ্য উৎপাদন শুরু করবেন তারা। তবে সারাবিশ্বের চাহিদা মেটানোর মতো উৎপাদনে যেতে আরো অনেক বছর লেগে যাবে। আর তাদের এই প্রকল্প যদি ব্যর্থ-ও হয়; তবুও কৃত্রিম খাবার তৈরির প্রচেষ্টায় এটি একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হবে বলেই মনে করেন তারা। 

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন