দুই স্বর্ণজয়ীর আকুতি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

একটা সময় প্রু মারমাকে কেন্দ্র করে হাজারোবার জ্বলে উঠেছে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ। ঝলমলে আলোয় হাসির ঝিলিক বুনেছিল নতুন স্বপ্নের বীজ। ওই আলো হারিয়ে যেতেও সময় লাগেনি। খেলা ছেড়ে প্রু এখন পাকা গৃহিণী, অবসরে শিশুদের কারাতে শিখিয়েদুধের স্বাদ ঘোলে মেটান কুশলী কারাতেকার মতো হারিয়ে যেতে চান না মারজান আক্তার প্রিয়া হুমায়রা অন্তরা শিফা।

কেবল প্রু নন, ঢাকা এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী সাইনু মারমা মুন্নি খানম হারিয়ে গেছেন কালের স্রোতে। মুন্নি পাড়ি জমিয়েছেন স্পেনে, নিজেকে আড়ালে নিয়ে গেছেন সাইনু। ২০১০ সালে কারাতে থেকে স্বর্ণজয়ী নারীদের মধ্যে একমাত্র মরিয়ম খাতুন এখনো খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। ছিলেন নেপাল এসএ গেমসের দলেও। নারীদের হারিয়ে যাওয়ার মিছিল বড় হলেও ছেলেদের চিত্রটা ব্যতিক্রম। এখনো খেলছেন ঢাকা এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী হাসান খান, হোসেন খান সৈয়দ নূরুজ্জামান।

নেপাল এসএ গেমসে আরচারি সব আলো কেড়ে নেয়ার আগে কারাতেই ছিল সবচেয়ে ঝলমলে ডিসিপ্লিন। মারজান হুমায়রা ছাড়াও দেশকে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছেন আল-আমীন ইসলাম। তীরন্দাজরা অ্যাকশনে আসার আগে দেশের পতাকা উড়িয়েছেন তিন কারাতেকা। ওই সাফল্যের তৃপ্তির মাঝে মারজান হুমায়রার মনে উঁকি দিচ্ছে শঙ্কার কালো মেঘও!

কোচ, কর্মকর্তা নিজের প্রচেষ্টায় পর্যায়ে আসতে পেরেছি। এসএ গেমসে স্বর্ণপদক পেয়েছি। কিন্তু দেশে কারাতে খেলার সুযোগ-সুবিধা না বাড়ালে অবস্থা ধরে রাখা কঠিন’—জানান শঙ্কিত মারজান। সুযোগ-সুবিধা বলতে তিনি দেশে খেলাটির কাঠামোকে বুঝিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট একটা কাঠামো থাকলে মারজা, হুমায়রারা ধারাবাহিকভাবেই উঠে আসবেন, সাফল্য পাবে দেশ। দেশে কারাতের কাঠামোর কারণে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পথ চলছেন হুমায়রা, ‘কারাতে খেলার মাধ্যমে ভালো চাকরি বা ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ নেই। তাই প্রতিনিয়ত নিজেকে নিজে উজ্জীবিত করেই এগোতে হয়। মাঝেমধ্যে নিজেই দ্বিধান্বিত হয়ে যাই। খেলা চালিয়ে যাব না পড়াশোনা করব।

ভালো লাগা থেকে মারজানের কারাতে খেলতে আসা। তার কথায়, ‘সিনেমায় দেখতাম নারীরা ফাইট করছে। ওটা আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করত। ভাবতাম, তারা পারলে আমি কেন ফাইট করতে পারব না? সেই থেকে খেলাটির বীজ মনের গভীরে গেঁথে গেছে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম, আমি কারাতের র্যাংকিংধারী খেলোয়াড় হব।নেপালে স্বর্ণ জয়-পরবর্তী সময়ের কথা ভাবলে গর্ববোধ করেন হুমায়রা। নিয়ে তার ভাষ্য, ‘স্বর্ণ জয়ের পর দেশের পতাকা উড়ছিল। মনে হচ্ছিল আমি যেন এভারেস্টের চূড়ায় উঠে দাঁড়িয়েছি, দেশের পতাকা সেখানে মেলে ধরেছি।পরক্ষণেই বাস্তবতার জমিনে ফিরে বলেছেন, ‘আমাদের কঠোর সংগ্রাম করে খেলা চালিয়ে যেতে হয়। বাসা থেকে আসা-যাওয়া করেই অনেকে ক্লান্ত হয়ে যান। কারাতে খেলায় ভালো করতে হলে আমাদের একটা কমপ্লেক্স প্রয়োজন।

হুমায়রার চাওয়া আদৌ পূরণ হবে কিনা সেটা সময়ই বলবে। আপাতত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) জিমনেশিয়ামের ফ্লোরটাই সম্বল। যেখানে ভারোত্তোলন, তায়কোয়নদো, জুডো, জিমন্যাস্টিকস, মার্শাল আর্ট, উশুর সঙ্গে সমন্বয় করে কারাতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এতগুলো ডিসিপ্লিনের মধ্যে কোনো একটার গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন থাকলে বাকিদের যেতে হয় নির্বাসনে।

এভাবে লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছে বেশ কয়েকটা ক্রীড়া ডিসিপ্লিন। ওই ডিসিপ্লিনগুলোর অ্যাথলিটরাই আবার বিদেশের মাটিতে ধারাবাহিকভাবেই পতাকা ওড়াচ্ছেন। আধুনিক ধ্যান-ধারণায় চলা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে এভাবে আর কতদিনবড় হয়ে উঠেছে প্রশ্নটাই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন