টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র থেকে উদ্গীরিত গ্যাসে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে স্থানীয়রা

ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হোক

সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণের ১৫ বছর পূর্ণ হলেও সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে গ্যাস উদ্গিরণ বন্ধ হয়নি আজও। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও প্রশাসন কোনো উচ্চ্যবাচ্যই করেনি। মাঝে গ্যাসের কারণে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়দের নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে হাঁপানি, অ্যালার্জি, শরীরের বিভিন্ন অংশে জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়েছে। বছরের পর বছর ধরে আশপাশের জমিতে ফসল হচ্ছে না। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থানীয় প্রযুক্তিতে গ্যাস উত্তোলন করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। আতঙ্কের বিষয় হলো, সব টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক থাকায় মানুষ পানি খেতে পারছে না। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গাছপালা মরে যাচ্ছে। গাছে এসে পাখি বসে না। জলাশয় পুকুরে মাছ বাঁচে না। আর বৃষ্টির সময় পানি বাড়লে কিছু মাছ এলেও আবার চলে যায়। অবস্থায় ওই এলাকায় মানুষের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ছে। ফলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। মাঝে বিদেশীদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ পর্যবেক্ষণ করা হলেও স্থানীয়ভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিশ্বের বহু দেশে এমন দুর্ঘটনার উদাহরণ রয়েছে, কিন্তু তারা দ্রুতই তা নিয়ন্ত্রণে এনে গ্যাসের উদ্গিরণ বন্ধের উদ্যোগ নেয়। এক্ষেত্রে ব্যয়ভেদে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমাধানের উদাহরণ রয়েছে। আমাদের এখানে কূপের মুখ বন্ধে পুরনো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, তাও যথাযথ পরিপূর্ণভাবে নয়। কারণে গ্যাস উঠছে এখনো। এটি পরিবেশ-প্রতিবেশ, মানুষসহ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে গ্যাস উদ্গিরণ বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। তাছাড়া সেখানে নতুন করে কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন করা যায় কিনা, তাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।

বিদ্যমান বাস্তবতায় স্থানীয় অধিবাসীদের সরিয়ে নেয়া এবং তাদের পুনর্বাসনে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে যাদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করাও জরুরি। গ্যাসের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নতুবা যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এমন দুর্ঘটনা মোকাবেলার সক্ষমতা দক্ষতা এমনকি অভিজ্ঞতা কোনোটিই বাংলাদেশের নেই। তাই গ্যাস উদ্গিরণ বন্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তাও নেয়া উচিত। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা অধিগ্রহণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দুর্ঘটনার ১৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও স্থানীয়দের অধিকাংশই কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি, যা কাম্য নয়। সময় যত গড়াবে, স্থানীয়দের মধ্যে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা জটিল রোগ দেখা দেবে; যা পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এটি প্রতিরোধে স্থানীয়দের অন্যত্র তথা নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরের আগে তাদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। এটি সরকারি বেসরকারি সহযোগিতায় পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমরা চাইব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কারিগরি কমিটির পাশাপাশি স্থানীয় পরিবেশ-প্রতিবেশ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করবে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গ্যাসের উদ্গিরণ বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্যাস রিজার্ভের পরিমাণও খতিয়ে দেখা যেতে পারে। গ্যাস উত্তোলন সম্ভব কিনা, সে ব্যাপারে দেশী-বিদেশী পরামর্শকদের সহায়তা নেয়া উচিত দ্রুত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন