শীতের তীব্রতার সঙ্গে রংপুর বিভাগে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। গত সোমবার পর্যন্ত দুই মাসে এ বিভাগে এ-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছে ২১ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেশি। তাছাড়া এসব রোগের কারণে অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও দেখা দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের আট জেলায় নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ২৪৪ জন। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ জন। এছাড়া অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে আরো ১০৬ জন। ১ নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পুরো বিভাগে ডায়রিয়ায় ১১ হাজার, অ্যাজমায় ৪ হাজার ৪১৪ এবং অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে ৬ হাজার ১০২ জন অসুস্থ হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২০৩ জন অ্যাজমা, ৯৫২ জন ডায়রিয়া এবং ১ হাজার ৩৪৮ জন অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গাইবান্ধায় অ্যাজমায় ৪৭৪ জন, ডায়রিয়ায় ৮২৩ জন এবং অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে ২ হাজার ২৩০ জন অসুস্থ পড়েছে। রংপুর জেলায় ৪০৬ জন অ্যাজমায় ও ১ হাজার ২৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। কুড়িগ্রামে অ্যাজমায় ৪৪৩ জন, ডায়রিয়ায় ৮৮৪ জন এবং অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২৩৫ জন। নীলফামারীতে ১ হাজার ২৯৫ জন অ্যাজমায়, ২ হাজার ৭৬২ জন ডায়রিয়া এবং ৫৯৭ জন অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। লালমনিরহাটে অ্যাজমায় ২৩৮ জন, ডায়রিয়ায় ৮৯১ এবং অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৪৬ জন। দিনাজপুরে ৩৮১ জন অ্যাজমায়, ১ হাজার ৩৪৪ জন ডায়রিয়া এবং ১ হাজার ৪৪০ জন অন্যান্য শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে অ্যাজমায় ৯০৬ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৭১ জন। সব মিলিয়ে পুরো বিভাগে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৫১৬ জন। এদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য রোগে মারা গেছে ১০ জন।
বিভাগের প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। এদের বেশির ভাগই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। শয্যা সংকটে করিডোরেও রোগীরা সেবা নিচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এক শয্যায় একাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অবস্থিত ৯ নং শিশু ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৪০টি। গতকাল এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল ৮৯ জন। ১০ নং শিশু ওয়ার্ডে ৪০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ছিল ৫৫ জন। নিবিড় পর্যবেক্ষণ (নবজাতক) কেন্দ্রে ৩৭টি শয্যার বিপরীতে ৩৯ জন নবজাতককে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এসব শিশুর অধিকাংশই ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।
রমেক হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মনিকা মজুমদার বলেন, পুরো হাসপাতালে বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। তবে তারা সবাই সঠিক চিকিৎসা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির পর প্রায় দুই মাসে এ হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হলেও হূদযন্ত্রের সমস্যায় একজন, পুষ্টির অভাবসংক্রান্ত জটিলতায় একজন এবং নিউমোনিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি
বলেন, যেসব শিশু জন্মের পর ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ খেয়েছে, তারা সহজে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হবে না। যদিও হয়, তাহলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। রোগ থেকে বাঁচাতে শীতকালে নবজাতকদের বিশেষ যত্ন নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।