মার্কিন সেনাদের আর থাকতে দিতে চান না ইরাকের এমপিরা

বণিক বার্তা অনলাইন

২০০৩ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানের মধ্য দিয়ে ইরাকে ঘাঁটি গাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা। ২০০৭ সাল থেকে কয়েক দফায় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হলেও এখনো দেশটিতে ৫ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়ে গেছে। গেল শুক্রবার মার্কিন বাহিনীর হামলায় ইরানি সেনা কমান্ডার কাসেম সোলেমানিকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় নতুন উত্তেজনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইরাক থেকে মার্কিন সেনাদের দেশ থেকে বের করে দিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে ইরাকের পার্লামেন্টে। খবর রয়টার্স

গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে জেনারেল সোলাইমানির গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরো কয়েকজন। সোলাইমানিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর মনে করা হতো। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস ফোর্সের কমান্ডারের এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান। এদিকে টুইটারে একের এক পাল্টা হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এরই মধ্যে ইরানের ৫২টি স্থাপনা টার্গেট করা করা হয়েছে। আমেরিকানদের ওপর কিংবা কোন লক্ষ্যবস্তুর ওপর ইরান আক্রমণ করলেই সেসব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।

এমন পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধামকিতে ক্রমেই অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতেগতকাল রোববার ইরাকে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি নিয়ে ভোটাভুটি হয় ইরাকের পার্লামেন্ট অধিবেশনে। এতে ইরাকে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি চান না বলে প্রস্তাব পাস করেছেন সংসদ সদস্যরা।

খবরে বলা হয়েছে, পাস করা ওই প্রস্তাবে ইরাকের সংসদ সদস্যরা দেশ থেকে সব বিদেশি সৈন্যকে ফেরত পাঠাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে বলেছে। তারা বলছেন, ইরাকে সকল বিদেশী সেনার উপস্থিতির অবশ্যই ইতি টানতে হবে সরকারকে। বিদেশী সেনাদের কোনোভাবেই ইরাকের স্থল, নৌ ও আকাশপথ ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।

মূলত মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যেই মার্কিন সেনাদের এখনো ইরাকে রাখা হয়েছে। আইএসবিরোধী যুদ্ধে সহায়তার জন্য বহুজাতিক বাহিনীর সহায়তা চেয়েছিল ইরাক সরকার। তবে মার্কিন সেনারা সরাসরি আইএস বিরোধী কোন অভিযান চালাচ্ছে না। আর বহুজাতিক বাহিনীর কাছে সরকারের করা ‘অনুরোধ’ প্রত্যাহার করতে হবে বলে জানিয়েছে সংসদ। এছাড়া ইরাকের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিুরদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ জানানোর কথাও বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।

ইরাকের সংবিধান অনুযায়ী সংসদে পাস হওয়া এই প্রস্তাব মানা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে দেশটির শিয়াপ্রধান সরকারের প্রধানমন্ত্রী আদেল আল মাহদি দ্রুত বিদেশী সেনা উপস্থিতি কমানোর জন্য ইতোপূর্বে পার্লামেন্টকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গতকাল সংসদ অধিবেশনে মূলত শিয়া পার্লামেন্ট সদস্যরাই উপস্থিত ছিলেন। দেশটির সংখ্যালঘিষ্ট সুন্নি এবং কুর্দি সংসদ সদস্যরা অধিবেশন বর্জন করেছেন। তারা মূলত মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিপক্ষেই। এক সুন্নি এমপির বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা এখন চলে গেলে ইরাকে অরাজক পরিস্থিতি দেখা দেবে, ইরানি মদদপুষ্ট শিয়াদের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা যাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন