সোলাইমানি হত্যায় ট্রাম্পের আদেশের বৈধতা কতটুকু

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যকাণ্ড নিয়ে ইতোমধ্যে খোদ যুক্তরাষ্টের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশে মার্কিন সেনারা বিমান হামলায় তাকে হত্যা করে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। এই ঘটনার প্রশ্ন উঠেছে ট্রাম্প এককভাবে ইরানের সর্বোচ্চ একজন সেনাকে হত্যার আদেশ দিতে পারেন কিনা। মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ও ডেমোক্রেটরা এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, এ হামলার আগে ট্রাম্পকে অবশ্যই কংগ্রেসের অনুমতির প্রয়োজন ছিল। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন নিজ দেশ ও দলের মধ্যে সমালোচনা চলছে, তখন ট্রাম্প এ হত্যাকাণ্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। শুক্রবারের এ হামলার ঘটনার পর ট্রাম্প ফ্লোরিডার মারে এ লাগো রিসোর্টের বাড়িতে সংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ শুরু করতে নয়, বরং যুদ্ধ বন্ধ করতে এ হামলা চালিয়েছি। মার্কিন স্বার্থ ও সেনাদের রক্ষায় সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ট্রাম্পের মতো এ হত্যাকাণ্ডের সাফাই গেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা ছাড়ায় পম্পেও দাবি করেন, আমেরিকার সেন্য ও নাগরিকদের ওপর আসন্ন হামলার পরিকল্পনা ছিল সোলাইমানির।

এ হামলাকে অভিশংসনের মুখে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ট্রাম্পকার্ড বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে তৃতীয় একটি দেশে এ ধরনের হামলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট-দলীয় কংগ্রেসম্যানরা। দেশটির কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট-দলীয় সদস্যরা এক বিবৃতিতে জানান, কংগ্রেস ও সিনেটকে অন্ধকারে রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরাকে অভিযান চালিয়েছেন। প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আঘাত আসতে পারে। বিঘ্নিত হতে পারে জাতীয় নিরাপত্তাও।

মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, আমরা কোনোভাবেই উদ্দেশ্যমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন কর্মকর্তা, কূটনীতিকদের জীবন ও মার্কিন স্বার্থকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারি না। এ ধরনের বিমান হামলা আগামী দিনগুলোয় মার্কিন স্বার্থের ওপর ভয়াবহ আঘাত বয়ে আনতে পারে। কংগ্রেসের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের উদ্যোগ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হতে পারে।

ডেমোক্র্যাট-দলীয় আরেক কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম স্কিফ টুইট বার্তায় বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে। মার্কিন জনগণ ইরানের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ চায় না।

এ হত্যাকাণ্ড ও হামলার আইনি বৈধতার বিষয়টি ‘বিতর্কের বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর চেরিস মর্ফে। তার মতে, এ হামলা মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। যদিও তিনি বলেছেন, ‘ইরান যদি মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা চালায়, তাহলে সেটি যুদ্ধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং আমরাও সম্ভবত সেভাবেই জবাব দিবো।’

তবে এ হামলায় ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্ত রয়েছে বলেও মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস স্কুল অব ল এর অধ্যাপক ও জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ববি চেজনি মনে করেন, মার্কিন সংবিধানের আর্টিকেল-২ অনুযায়ী চিফ অব কমান্ডার হিসেবে আমেরিকা স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট যেকোন সময় সামরিক শক্তি ব্যবহার, যুদ্ধের আদেশ দিতে পারেন। আবার অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ইরানের সাথে উত্তোজনার পারদ তৈরি করে ট্রাম্প মূলত ১৯৭৩ সালের ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্টের লংঘন করেছেন। এই অ্যাক্ট অনুযায়ী, মার্কিন বাহিনীর ক্ষতির কারণ হয় এমন ক্ষেত্রে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কোনো দেশের সাথে যুদ্ধ বা হামলা জড়িত হওয়ার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।

এর আগে আল কায়েদার ও ইরাকে হামলার জন্য ২০০১ ও ২০০২ সালে দুটি  সামরিক শক্তি প্রয়োগের অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। তবে নতুন করে ইরানের সাথে যুদ্ধ জড়াতে কংগ্রেস অনুমোদন দিবে কিনা সেটি অনিশ্চিত। কারণ গত বছর ইরানের সাথে উত্তোজনার মধ্যে হাউস অব রিপেরেজেনটেটিভে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনে হামলার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। 

এর আগে গতকাল শুক্রবার ভোরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদপ্তর পেন্টাগন। 

১৯৯৯ সাল থেকে মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ইরানের কুদস ফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন। তার নেতৃত্বে এই বাহিনী বিদেশে গোপন অভিযান পরিচালনা করেছে। ১৯৮০ সালের ইরান ইরাক যুদ্ধে দেশের হয়ে লড়তে তিনিই প্রথম এগিয়ে আসেন।

১৯৯৮ সালে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর থেকে অন্তরালে লেবানের হিজবুল্লাহ, সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ এবং ইরাকে শিয়া মতাদর্শী মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক জোরদার করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন