সুসংগঠিত দল সরকারের জন্য বিরাট শক্তি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সফলভাবে সরকার পরিচালনা করতে দলকে সুসংগঠিত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা সরকার সফলভাবে কাজ করতে পারবে তখনই, যখন সরকারের নেতৃত্ব দেয়া দল সুসংগঠিত থাকে। কারণ দল সুসংগঠিত থাকলে এটা হচ্ছে সরকারের জন্য বিরাট শক্তি।

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির কার্যনির্বাহী সংসদ উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শক্তিটাই সব থেকে বেশি কাজে লাগে একটা দেশকে উন্নত করতে। এটা আমি নিজে উপলব্ধি করি এবং সে কারণে আমি সবসময় সংগঠনের ওপর গুরুত্ব দিই। বিভিন্ন সময় দলের ক্রান্তিলগ্নে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেদের জীবন পণ রেখে তারা সংগঠনকে ধরে রেখেছে।

আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কমিটিকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তিন বছর মেয়াদি কমিটি করেছি। এখন লোকসংখ্যা বেড়েছে। আমাদের জেলা বেড়ে গেছে। আমাদের কার্যপরিধি বেড়ে গেছে। যেসব জেলায় সম্মেলন করা দরকার, তা আমরা করতে পারিনি। অনেক জায়গায় সময় দিয়ে তা আবার স্থগিত করতে হয়েছে। কারণ ডিসেম্বরে আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি থাকে, দলীয় কর্মসূচি থাকে, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সময় ছিল না। তাই এখন পরিকল্পনা নিয়ে যেসব জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে, সেগুলোর কাউন্সিল করে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একটা শক্তিশালী সংগঠন। এদেশের রাজনীতিতে কেউ যদি কিছু শিখিয়ে থাকে, সেটা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে করে যাচ্ছে। ঐতিহ্যটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার নিয়ে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সাধারণত মানুষ দল ছেড়ে দেয় মন্ত্রিত্বের লোভে। আর জাতির পিতা মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য।

কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে গিয়ে আরেকটি দল গঠন করেছিলেন। তখন খুব প্রয়োজন ছিল দলকে সুসংগঠিত করা।

বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তার এই যে দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব এবং সংগঠনকে সুসংগঠিত করা; যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুুদ্ধ করেছিলেন বলেই আমরা আজ স্বাধীন দেশ পেয়েছি। জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, উদ্দেশ্য একটাই ছিল যে এমনভাবে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেয়া যেন কোনোদিন সংগঠনটা ক্ষমতায় আসতে না পারে বা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিতে না পারে।

সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা৯৬ সালে সরকার গঠন করি। বাংলাদেশের জনগণ প্রথম আশার আলো দেখতে পায়। তারা প্রথম দেখতে পায় সরকার জনগণের সেবক। মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে সরকার জনগণের সেবা করে।

টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ১১ বছর পূর্ণ হলো একটানা। এখন অন্তত এটুকু বলতে পারি, মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস, সমর্থন আমরা পেয়েছি তাতে বাংলাদেশের মানুষ জানে, একমাত্র আওয়ামী লীগ থাকলে উন্নয়ন হয়, সে কথা প্রমাণ করতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে, বটমলেস বাস্কেট হবে। আজকে তারা সে কথা বলতে পারবে না। বরং আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি, সেটা শুধু আমাদের এখানেই না, বিশ্বব্যাপী খুবই সমাদৃত স্বীকৃত।

বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে নানা অপবাদ দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে৮১ সাল থেকে টানা দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ হাসিনা বলেন, কত রকমের অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে। আজকে আমরা প্রমাণ করেছি, একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশকে উন্নত করতে পারে, সমৃদ্ধ করতে পারে, এগিয়ে নিতে পারে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এটা আওয়ামী লীগই করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা স্মার্ট না, আওয়ামী লীগ নেতারা আধুনিক না, আওয়ামী লীগে শিক্ষিত লোক নেই এমন অনেক অপবাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যারা নিজেদের স্মার্ট বলে ক্ষমতায় এসেছে, তারা শুধু নিজেদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার জন্য স্মার্টনেস কাজে লাগিয়েছে। মানুষ কিন্তু তাদের স্মার্টনেস থেকে কিছু পায়নি। রাজনীতির যে স্মার্টনেস, তা আওয়ামী লীগই দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগই দেখিয়েছে কীভাবে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হয়।

ব্যাপকভাবে মুজিব বর্ষ উদযাপন করার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুু কন্যা বলেন, ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকে আমরা কাউন্টডাউন শুরু করে ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা মুজিব বর্ষ শুরু করব। বছরব্যাপী সারা দেশে অনুষ্ঠান করব। অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা আবার নব উদ্যমে জাতির পিতার দেয়া স্বাধীনতাকে, বাংলাদেশকে আরো উন্নত করব। স্বাধীনতাকে আমরা আরো অর্থবহ করব, যেন বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে।

বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা স্মরণ করেন। যৌথ সভা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি উৎসর্গ করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে যৌথসভায় দলটির কার্যনির্বাহী সংসদ উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সভা শুরু হয়ে কিছুক্ষণ চলার পর মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথ সভাটি আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। মুলতবি সভাটি সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে শুরু হবে।

দক্ষিণের টিম লিডার আমু, উত্তরের তোফায়েল: বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমন্বয় করার জন্য দলের দুই প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে দুটি আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণের টিম লিডার দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং সদস্য সচিব দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে টিম লিডার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং সদস্য সচিব উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন