মৌলভীবাজারে টমেটোর সন্তোষজনক ফলন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে এবার টমেটো চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। নিজের জমির পাশাপাশি অনেক কৃষকই অন্যের জমি ইজারা নিয়ে সবজিটির চাষ করেছেন। সবকিছু অনুকূলে থাকায় বিভিন্ন জাতের টমেটোর ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। একই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা।

কমলগঞ্জের মাধবপুরের পাত্রখোলা চা-বাগান ক্লাব এলাকায় ৯০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে টমেটোর চাষ করেছেন ৩০ জন কৃষক। প্রতি বিঘা জমি তারা ইজারা নিয়েছেন ৫-৭ হাজার টাকায়। ভালো লাভ হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এ কৃষকরা প্রতি বছরই এখানে ইজারাভিত্তিক চাষ করে থাকেন। এরই মধ্যে তারা ক্ষেতের টমেটো বিক্রি শুরু করেছেন।

এখানে দুই বছর ধরে টমেটো চাষ করছেন আদমপুর ইউনিয়নের মধ্যভাগের কৃষক মো. তওহীদ। এবার তিনি সবজিটি চাষ করেছেন পাঁচ বিঘা জমিতে। প্রতি বিঘায় শ্রমিক, চারা, সার ও কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। একটি চারার দাম পড়েছে ৮-১০ টাকা। পাঁচ বিঘা জমি থেকে তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। শুরুতে পাইকারি হিসেবে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করেছেন ৭০ টাকায়। আর এখন প্রতি কেজিতে দাম পাচ্ছেন ৩৫-৪০ টাকা। এ বিক্রি চলবে চৈত্র মাস পর্যন্ত।

মো. তওহীদ বলেন, এবার টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। আগামী বছর এখানে জমি ইজারা না পেলে অন্য কোথাও জমি খুঁজব। এ অঞ্চলে উৎপাদিত টমেটো বিক্রির জন্য আমাদের ভাবতে হয় না। হবিগঞ্জ, কুলাউড়া, সিলেট ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা মাঠে এসে টমেটো নিয়ে যান।

শিমুল নামে আরেক টমেটো চাষী বলেন, আগে তিনি ধান আবাদ করতেন। তবে ধানে তার খুব একটা লাভ হতো না। এখন টমেটো চাষ করে ভালো লাভ হচ্ছে। তিনি এবার টমেটো চাষ করেছেন আট বিঘা জমিতে। এতে ৯ লাখ টাকা খরচ হলেও এরই মধ্যে ১১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। বিক্রি করতে পারবেন আরো অন্তত ৬-৭ লাখ টাকার।

কৃষকদের দাবি, এ ৯০ বিঘা থেকেই এবার অন্তত ২ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হবে। তবে কৃষি বিভাগের লোকজন না আসায় টমেটো চাষে তাদের মাঝেমধ্যে সমস্যায় পড়তে হয়।

এদিকে মাধবপুরের কাটাবিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধলাই নদের পাড়ঘেঁষে টমেটো চাষ করছেন ১২ জন কৃষক। এখানকার টমেটো চাষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবার টমেটোর বাজার ভালো। তবে অনেক সময়ই গাছ ঢলে পড়াসহ নানা কারণে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে কোনো পরামর্শ পাওয়া যায় না।

আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, এবার তিনি ১০ হাজার টাকা করে মোট আট বিঘা জমি ইজারা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আরো ৫-৬ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন। তবে তারা এক জমিতে বেশিদিন টমেটো চাষ করেন না। কারণ একই জমিতে বারবার টমেটো চাষ করলে রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়। এজন্য তারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে টমেটোর চাষ করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বারি-৪ ও ৮, ইকোপ ও রাজা জাতের টমেটোর চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে কমলগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদরে। এ থেকে প্রতি হেক্টরে সবজিটির ফলন হয়েছে প্রায় ২২ টন। এছাড়া টমেটোর চারা বিক্রি করেও অনেক চাষী লাভবান হয়েছেন। কোনো কোনো কৃষক চারা বিক্রি করেছেন ৫-৭ লাখ টাকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কাজী লুত্ফুল বারী বলেন, এবার টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছেন। এখনো প্রতি কেজি টমেটো খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, চা-বাগান এলাকায় আমাদের লোকজন কম যায়। তবে কৃষি উপসহকারীদের সেখানে যাওয়ার কথা। কৃষকরা তাদের সমস্যার কথা বললে অবশ্যই পরামর্শ পাবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন