গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অবস্থিত
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট জয়দেবপুর বা বিসিক শিল্পনগরীতে নিয়মিত ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে
না পারা, বিদেশী কার্যাদেশ কমে যাওয়া,
স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের অযৌক্তিক নানা দাবি-দাওয়াসহ বিবিধ
কারণে বন্ধ হয়েছে অন্তত ১৫ শিল্প-কারখানা। বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে,
এরইমধ্যে বন্ধ হওয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিস
দেয়া হয়েছে এবং নিয়মানুযায়ী এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র
ও মাঝারি শিল্প-কারখানার উন্নয়নে ১৯৯৭ সালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে ৪৪ দশমিক ৫০ একর জায়গার ওপর এ শিল্পনগরীটি গড়ে
ওঠে। এখানে ২৭৪টি প্লট রয়েছে। এসব প্লটের মধ্যে ১৪৫টি শিল্প ইউনিট আছে। এগুলোর
মধ্যে নির্মাণাধীন রয়েছে ছয়টি ইউনিট। অন্যদিকে ১৫টি শিল্প ইউনিট নিষ্ক্রিয় বা
রুগ্ণ। বন্ধ কারখানাগুলো দ্রুত চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকদের চিঠি দিয়ে
তাগাদা দিচ্ছে বিসিক কর্তৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতায় চালু করতে না পেরে অনেকেই শিল্প
ইউনিট হস্তান্তর করছেন নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে।
শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, একসময়
লাভজনক ও সম্পূর্ণ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা নাইটিঙ্গেল ফ্যাশন লিমিটেড গত
সেপ্টেম্বর মাস থেকে বন্ধ। নিটিং অ্যান্ড ডায়িংসহ এখানে থাকা কোম্পানিটির তিনটি
কারখানার সবগুলোর কার্যক্রমই এখন বন্ধ।
কোম্পানিটির এমডি আব্দুস সালাম মাসুম
বলেন, বিদেশী ক্রেতাদের কার্যাদেশ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে
সমস্যা, নানা ইস্যুতে আন্দোলন,
শ্রমিক নেতাদের উৎপাতসহ নানা সমস্যার কারণে
কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি জানান, চলতি জানুয়ারি থেকে কারখানাগুলো ফের
চালুর জন্য চেষ্টা হচ্ছে।
শুধু নাইটিঙ্গেল নয়, এ
শিল্পনগরীতে এ রকম আরো ১৫ শিল্প ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি
হচ্ছে মেসার্স তুলসী স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ,
ম্যাক্স ড্রাগ লিমিটেড, হাজি
প্লাস্টিক লিমিটেড, পারিজাত কেমিক্যাল অ্যান্ড মিনারেলস লিমিটেড, ব্রাইট
টিউব ইত্যাদি। এছাড়া অনেকে কারখানা চালু করতে না পেরে নতুন উদ্যোক্তার কাছে শিল্প
ইউনিট হস্তান্তর করছেন। শিহাব নামে একজন উদ্যোক্তা হাজি প্লাস্টিক লিমিটেডের
কারখানায় শিগগিরই তৈরি পোশাক কারখানার কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানান।
বিসিক শিল্পনগরী কোনাবাড়ীর কর্মকর্তা
হাবিবুর রহমান রাসেল জানান,
ঢাকার খুব কাছে অবস্থিত এটি একটি ইমাজিং
শিল্পনগরী। এখানকার সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে এটি দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য
ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোকে নোটিস দেয়া হয়েছে। প্লট খালি করতে
অথবা হস্তান্তরের জন্য নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।
এদিকে গাজীপুর জেলা বিসিক কর্মকর্তা
নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কারখানা
মালিকদের সঙ্গে কথা জানা গেছে,
মূলত ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার
কারণেই অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়েছে।’
তবে এ শিল্পনগরীসংশ্লিষ্ট অধিকাংশ
লোকজনই এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ও রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা নিয়ে নানা
ভোগান্তির কথা বলেছেন। তাদের মতে,
বিদেশী ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে এখানকার
অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি।
শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, বিসিক
অফিসের পাশ দিয়ে প্রধান যে সড়কটি ভেতরে প্রবেশ করেছে, সেটির
নানা জায়গা ভাঙা এবং কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোটখাটো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পল্লী
বিদ্যুতের পাশের সড়কটিরও একই দশা। মাশরিকি টেক্সটাইল ও লাইফ টেক্সটাইলের সামনের
রাস্তাসহ অনেক সড়কের ওপর পানি জমে রয়েছে। গর্ত সৃষ্টি হয়ে তার মধ্যে জমে থাকা পানি
ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। অধিকাংশ ড্রেনের অবস্থা নাজুক, ময়লা-আবর্জনা জমে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে পানি
উপচে পড়ছে। ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় জমে
থাকে। লাইফ টেক্সটাইলের ম্যানেজার
(অ্যাডমিন)
শোয়েব আহমেদ খান জানান, সামান্য
বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়। তখন মাল বোঝাই গাড়ি ও এখানে কর্মরত
কর্মীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বিসিক কর্তৃপক্ষ জানায়, বেশ কয়েকটি রাস্তার কাজ
করা হয়েছে, বাকি
রাস্তাগুলোও পর্যায়ক্রমে মেরামত করা হবে। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার জন্যও পরিকল্পনা
নেয়া হয়েছে এবং কিছু জায়গায় কাজ করা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।