বিশাল ‘তালার’ আড়ালে প্রাচীন সমাধি

বণিক বার্তা অনলাইন

উঁচু থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল এক তালা। এমনকি চাবি ঢোকানোর মতো নিখুঁত ছিদ্রও চোখে পড়বে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি সমাধি এলাকা। পশ্চিম জাপানের ওসাকায় সাকাই শহরে কয়েকটি প্রাচীন সমাধি  ও স্মৃতিস্তম্ভ মিলে এমন একটি আকার পেয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকরা মনে করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এমন একটি আকার দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগও থাকতে পারে। বিশেষ করে এমন বৃহৎ অকাঠামোকে প্রভাব প্রতিপত্তি ও স্থাপত্যশৈলীর দক্ষতার নির্দশন মনে করতেন রাজারা। স্থানটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো।

বস্তুত কোফুন শব্দের জাপানি অর্থ হল সমাধিস্তূপ। তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতকে জাপানে প্রায় ২০ হাজার কোফুন ছিল। এই সময়ে নির্মিত অধিকাংশ সমাধি পাওয়া যায় এখনকার ওসাকাতে। সাকাই, হাবিকিনো ও ফুজিদেরা শহরজুড়ে বিস্তৃত ৪৯টি সমাধিসৌধ নিয়ে গড়ে উঠেছে গুচ্ছবদ্ধ মোযু-ফুরুইচি কোফুন। এই সমাধিসৌধগুলোর ‍উচ্চতা কয়েক মিটার থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত হয়। 

তৎকালীন লোকেরা বিশ্বাস করতো, মানুষ কাজ করে দিনে আর দেবতারা কাজ করেন রাতে। সেই ধর্মবিশ্বাস আর স্থাপনা নির্মাণের পর ১৬ হাজার বছর পার হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, রহস্যময় সমাধিগুলো কেবল সমাধি নয়, প্রভাবশালীদের সৌর্য্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতার সাক্ষী এই সমাধিক্ষেত্র। 

এগুলোর মাঝে তালার আকৃতির একটি সমাধিকে সম্রাট নিন্তোকুর সমাধি বলে মনে করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে দাইসেনের এই কোফুনটি সর্ববৃহৎ। এটির উচ্চতা ২৭ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ৪৮৬ মিটার। ওই সময় কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর ৮ মাস ধরে ২ হাজার শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ সমাধি গড়ে তোলা হয়েছিল বলে ধারণা করে জাপানের প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এটি মিসরের পিরামিডের চেয়েও বেশ বড়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমাধিসৌধ অতীতকালের উচ্চমানের স্থাপত্যকলার প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে এসব স্থাপনা জাপানের মানুষের আচরণগত ইতিহাস বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হয়। 

তবে এসব সমাধি এখনো খনন করা হয়নি। ফলে এগুলোর মধ্যে আসলে কী আছে তা জানা সম্ভব হয়নি। ফলে এসব সমাধি নিয়ে রহস্য দিন দিন ঘনীভূতই হয়েছে। দাইসেনের কোফুনে সম্রাট নিন্তোকুরসহ পাঁচজন সম্রাট  চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বলে দাবি করা হয়। 

প্রত্নতাত্ত্বিকরা সমাধির গায়ে বেশ কিছু মৃৎশিল্পের নমুনা পেয়েছেন। স্থানীয়ভাবে বলা হয় হানিওয়া। হানিওয়াগুলো মূলত মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী, সৈনিক ইত্যাদির মোটিফে তৈরি করা। মূলত গবেষকরা যেটুকু তথ্য পেয়েছেন এই যুগ সম্পর্কে তার প্রায় সবটুকুই এসেছে এই হানিওয়া থেকে। প্রায় ২৯ হাজার রকমের হানিওয়া পাওয়া যায়।

এ থেকে ধারণা করা হয়, ওই সময় জাপানে মৃৎশিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। এই সময়েই সুয়েকি পণ্যদ্রব্যের উৎপাদন শুরু হয়। এগুলো তৈরি হতো ধূসর নীল কাদামাটি থেকে এবং বেশ শক্ত কিন্তু পাতলা হতো। এসব মাটির পাত্র ১০০০ থেকে ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পোড়ানো হতো। এখনকার সময়ে পোর্সেলিন তৈরিতেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।  যদিও এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে চীনারা।

বিবিসি অবলম্বনে উম্মে সালমা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন