ফুটবল মাঠে বিপ্লবী কণ্ঠস্বর

পৃথিবীকে আরেকটু ভালো করতে চান র‍্যাপিনো

আপনি এই পৃথিবীতে থাকেন, এই শহরে থাকেন, আপনি ট্যাক্স দিচ্ছেন। আপনি সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত। তো আপনি চাইলেই এসব থেকে পালিয়ে যেতে পারবেন না।গার্ডিয়ানের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার হাতে নিয়ে একজন ফুটবলারের দায়িত্ব সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন নারী বিশ্বকাপজয়ী মার্কিন তারকা মেগান র‍্যাপিনো। ফিফা দ্য বেস্ট ব্যালন ডিঅর জিতে ২০১৯ সালের সবচেয়ে আলোচিত ফুটবলারও তিনি।

ফুটবল নিছক একটি খেলা নয়। এর সঙ্গে রাজনীতি, অর্থনীতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। আর সেটিকেই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চান র‍্যাপিনো। যিনি একজন ফুটবলারের চেয়েও বেশি কিছু। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি সোচ্চার কণ্ঠস্বর। তাই ব্যালন ডিঅর হোক কিংবা ফিফা দ্য বেস্ট প্লেয়ার, ব্যক্তিগত অর্জন যেন একটু অস্বস্তিই দেয় এই মার্কিন তারকাকে। তিনি বলেন, ‘আমি এমন মনে করি না যে আমি সেরা খেলোয়াড়। সম্ভবত আমি আমার দলেরই সেরা খেলোয়াড় নই।’ ‘আমি এমনটা মনে করি না যে আমি লিওনেল মেসি। আমি সেই পর্যায়ের নই। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে সেটা করতে পারি। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সেলিব্রেটি ফুটবলার র‍্যাপিনো চাইলেই আয়েশি জীবন বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু যিনি পৃথিবীকে বদলে দিতে চান, তার পক্ষে নিজের আশপাশে যা ঘটছে, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অসম্ভব। যেমনটা পারেননি ব্রাজিলিয়ান তারকা সক্রেটিস, ডাচ তারকা রুড খুলিতসহ আরো কেউ কেউ।

র‍্যাপিনোর ভাবনটা তাই রকম, ‘প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত দায়িত্ব আছে এই পৃথিবীকে আরো বাসযোগ্য করার জন্য যা করা উচিত তা সেরাটা দিয়ে করার। এটা সেই মুহূর্ত। আমি সে সম্পর্কে সচেতন এবং বুঝতে পারি। আমি কেবল এজন্য এসব পুরস্কার জিতছি না যে আমি অসাধারণ একটি বছর কাটিয়েছি। এটা সবকিছুর মিলিত ফল। এটা অন্য আরো অনেক মানুষের মাধ্যমে এসেছে। দলের সঙ্গে এসেছে, আমরা দেখিয়েছি ঐক্যবদ্ধভাবে কী করতে পারি এবং কীভাবে করতে পারি। পাশাপাশি যেভাবে আমরা মাঠে এবং মাঠের বাইরে লড়াই করেছি, এটা এসেছে কলিন কেপারনিকের (সহিংসা বর্ণবাদবিরোধী এনএফএল তারকা) কাছ থেকে, এসেছে মিটু (যৌন সহিংসতাবিরোধী আন্দোলন) থেকে। এটি এসেছে রকম আরো অনেক আন্দোলন থেকে।

তিনি আরো বলেন, ‘এটা খুব স্পষ্ট যে আমার আশপাশে যা কিছু ঘটছে, সেসব নিয়েই এই আমি। তাই মঞ্চে উঠে কেবল পরিবার বন্ধুদের স্মরণ করা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার। এটা গ্রহণযোগ্যও নয়। আমি বরং সম্মানিত বোধ করি এই চরম মুহূর্তগুলোর মুখপাত্র হতে পেরে। এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব এবং এটাকে ধরে রাখাও আমি দায়িত্ব বলে মনে করি।

গত বছর নারী বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জেতার পর বিস্ময়কর এক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছিলেন র‍্যাপিনো। যখন স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরাসমান পারিশ্রমিকস্লোগান ধরেছিল। বিষয়ে বলেন, ‘কী অসাধারণ এক মুহূর্ত! ফুটবলের যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো, এখানে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকে।

কেবল এটুকুই নয়, খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়েছিলেন র‍্যাপিনো। বিশ্বকাপের সময় ভাইরাল হয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়র‍্যাপিনোকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ফ্রান্সে সফল হওয়ার পর হোয়াইট হাউজ থেকে দাওয়াত পেলে কী করবেন? সে সময় র্যাপিনো গালি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি হোয়াইট হাউজে যাচ্ছি না।তার প্রত্যুত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘মেগানের উচিত কথা বলার আগে জিতে আসা।

তবে আবশ্যিকভাবে র‍্যাপিনোর কণ্ঠস্বরকে বলিষ্ঠ রাখতে ভূমিকা রাখছে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়, যা ন্যায্যতা দিচ্ছে তার সংগ্রামী কার্যক্রমকেও। বিশ্বকাপ জেতার চাপটা তাই কেমন ছিল জানতে চাইলে, ‘আমরা নিজেরা নিজেদের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করেছিলাম, তা বাইরে থেকে কেউ আমাদের ওপর দিতে পারত না। আমরা সবসময় অনুভব করেছি, বিশ্বকাপ জিততে না পারলে সেটি হতো আমাদের জন্য মহাবিপর্যয়।

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন