সেফটি অ্যান্ড রাইটসের জরিপে ২০১৯

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় প্রতি মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৪৭ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২০১৯ সালে প্রতি মাসে ৪৭ দশমিক ৬৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির জরিপ ফলাফল বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, নিরাপত্তা সম্পর্কিত সচেতনতার অভাবে দেশে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় প্রতি বছর অনেক শ্রমিক মারা যাচ্ছেন। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি।

সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র (১৫টি জাতীয় ও ১১টি স্থানীয়) মনিটরিং করে গতকাল এক প্রতিবেদনে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, যেসব শ্রমিক কর্মক্ষেত্রের বাহিরে অথবা কর্মক্ষেত্র থেকে আসা-যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তাদের সংবাদপত্র জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এবং শ্রমিকের মৃত্যু প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে, এমন তথ্য উল্লেখ করে সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি বলেছে, এই ডিসেম্বর মাসেই উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত এই এক বছরে সারা দেশে ৪২৩টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৫৭২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০১৮ সালে ৪৮৪টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৫৯২ জন শ্রমিক নিহত হন।

সংবাদপত্রের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতে, যাদের সংখ্যা মোট ২১২ জন, এর পরই রয়েছে নির্মাণ খাত। এই খাতে নিহত হয়েছেন ১২৯ জন, ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ধরনের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ১০২ জন, কলকারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন এবং কৃষি খাতে ২৯ জন।

মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ২১৮ জন, বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে ৬৭ জন, আগুনে পুড়ে ৬৭ জন, ছাদ, মাচা বা ওপর থেকে পড়ে ৫৪ জন, শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ৪৫ জন, ব্রিজ, ভবন, ছাদ, মাটি ও দেয়াল ধসে ২৮ জন, রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাংক বা পানির ট্যাংকের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ২৫ জন, বজ পাতে ২৫ জন, পানিতে ডুবে ২০ জন, বিভিন্ন বিস্ফোরণে ১৭ জন এবং অন্যান্য কারণে ৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

সেফটি অ্যান্ড রাইটসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, প্রতি বছর নিরাপত্তা সম্পর্কিত সচেতনতার অভাবে দেশে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমিক মারা যাচ্ছেন। আমরা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি।

তিনি বলেন, সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি একটি অধিকার রক্ষাকারী সংগঠন হিসেবে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমগ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় এসব প্রচেষ্টা খুব তাত্পর্যপূর্ণ নয়। সুতরাং সেফটি অ্যান্ড রাইটস বিশ্বাস করে সবার যৌথ প্রচেষ্টাই পারে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা থেকে শ্রমিকের জীবন বাঁচাতে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব মালিকের। আর সরকার এ-সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে এবং মালিক কর্তৃক গৃহীত কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করবে।        

সেফটি অ্যান্ড রাইটসের দাবি, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। তাছাড়া যত্রতত্র কলকারখানা গড়ে ওঠায় দুর্ঘটনায় শুধু শ্রমিক নয় সাধারণ জনগণও আক্রান্ত হচ্ছে। এসব দুর্ঘটনা প্রতিহত করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন