উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টেক ফ্রন্টিয়ার কাজে লাগাতে হবে

শ্রী মুল্যানি ইন্দ্রবতী

ভবিষ্যতে অর্থনীতির স্বার্থে জোরালো প্রযুক্তিগত রূপান্তর নিশ্চিত করা হবে একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। জাতীয়, আঞ্চলিক বৈশ্বিক পর্যায়ে ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তিগুলো নতুন সুযোগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তবে সেগুলো নতুন কিছু নীতিগত চ্যালেঞ্জও প্রবর্তন করছে, সৃষ্টি করছে।

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের যাত্রা অর্থনৈতিক নৈপুণ্য লক্ষণীয় বাড়িয়েছে, কার্যকারিতা-দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়েছে, বিশ্বায়নের গতি ত্বরান্বিত করেছে এবং প্রক্রিয়ায় মানবিক সমাজের রূপান্তর ঘটিয়েছে। তবে আমাদের যুগের-সময়ের সুনির্দিষ্ট ইস্যু হওয়ায় ডিজিটাল বিপ্লব শাসন বা পরিচালনের সব পর্যায়ে নতুন নতুন নীতি সহযোগিতা দাবি করে। সর্বোপরি, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সর্বসাম্প্রতিক ঢেউ বিশেষত অনেক দূর অবধি বিস্তৃত এবং সেটি আসছে খুব দ্রুততার সঙ্গে। এটি পণ্য, সেবা ধারণা বিনিময়ের প্রক্রিয়াকে মৌলিকভাবে বদলে দিচ্ছে। একই সঙ্গে জোরালোভাবে কমে আসা ব্যয় ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলোকে অনেক বেশি সমর্থনযোগ্য অভিগম্য করে তোলায় সেগুলো অব্যাহতভাবে মানুষের জীবন জীবিকার বড় ধরনের রূপান্তর ঘটাবে বৈকি।

যদিও বিপদ আছে যে এসব অর্জন/ সুফল (গেইনস) বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছবে না। এক হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সাল নাগাদ বিশ্বের তিন বিলিয়ন মানুষ এখনো ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং আরো বিপুলসংখ্যক মানুষের ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগাতে খুব কম সুবিধা থাকবে বা আদৌ কোনো সুবিধা থাকবে না। এর অর্থ ডিজিটাল এক্লুশনের সমস্যা অ্যাড্রেস করতে দেরি করা যাবে না।

দুর্ভাগ্যক্রমে, পথওয়েজ ফর প্রসপারিটি কমিশন অন টেকনোলজি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্টমেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে যে প্রতিষ্ঠানের আমিও একজন সহপ্রধানদেখিয়েছে যে সবার সুফল-উপকার নিশ্চিতে উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনো ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিগুলোর নতুন তরঙ্গ কাজে লাগাতে পারে। কৃষি, শিল্প উৎপাদন, সেবা বাণিজ্য, আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক খাতের সংযোগ এবং অভ্যন্তরীণ আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো সমৃদ্ধির নব নব পথ উন্মোচন করেছে। বিশ্বজুড়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর এখন নতুন নতুন শিল্প-কারখানা তৈরি, ভালো সেবা প্রদান এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

তবে ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো বাদ দেয়ার (এক্লুশন) বিদ্যমান ধরন সুরক্ষিত-পাকাপোক্ত করা, অনেক মানুষের জীবিকা ব্যাহত করা এবং সবলকে দুর্বলের ওপর শোষণ নির্যাতন অব্যাহত রাখতে নতুন হাতিয়ারও প্রদান করতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলো একটি কঠিন অবস্থা থেকে শুরু করছে। কারণ তারা এরই মধ্যে নিম্ন মানব পুঁজি, অকার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং কঠিন ব্যবসায়িক পরিবেশের মতো চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করছে। পরিবর্তনের মুখে এখনো নীতিপ্রণেতাদের অবশ্যই নিজেদের প্যারালাইজ হওয়ার সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না। টেক বিপ্লবের পরোক্ষ পর্যবেক্ষক না হওয়ার চেয়ে তাদের অবশ্যই নিজেদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।

উন্নয়নশীল দেশগুলো এবং উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর অন্তত তাদের কাছে অফার কিছু সুযোগের সদ্ব্যবহারে সমর্থ হওয়া উচিত। কমিশন যেমনটা দেখিয়েছে, অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারগুলোর হাতে কিছু নীতি অপশন আছে। কিন্তু প্রযুক্তি একাই সফলতার নিশ্চয়তা দেবে না। নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই স্থানীয় প্রেক্ষাপট পরিস্থিতি/ অবস্থাও অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, যাতে তারা সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারে; যেটিতে প্রযুক্তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি চালিত করে।

বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতা করতে হলে অন্তর্ভুক্তিতার সর্বোচ্চকরণ সঠিক ধরনের উদ্ভাবনের দিকে বাজারকে পথনির্দেশের মাধ্যমে সব দেশকে নতুন আসন্ন প্রযুক্তিগুলোর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে হবে। সরকারগুলোকে এটি স্বীকার করে শুরু করা উচিত যে, চ্যালেঞ্জ কেবলডিজিটাল পলিসিনয়। বরং তাদের আহ্বান জানাতে হবে একটিহুল অব- ইকোনমিবামোস্ট অব সোসাইটিঅ্যাপ্রোচের। এবং সফলতার মূল চাবি যেহেতু অন্তর্ভুক্তি, সেহেতু শুরু থেকেই নীতি প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর জন্য পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টির উন্নয়ন ঘটাতে হব।

উল্লিখিত উদ্দেশ্য পূরণে জাতীয় সরকারগুলোকে চারটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রস্তুতির জন্য পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। সেগুলো হলো এক. অবকাঠামো, দুই. মানব পুঁজি/ সম্পদ, তিন. নীতি নিয়ন্ত্রণবিধি এবং চার. অর্থায়ন। এগুলো হলো ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কারিগরি স্তম্ভ।

একই সঙ্গে আঞ্চলিক পর্যায়ের নীতিপ্রণেতাদের, বিশেষ করে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নীতি সহযোগিতার ওপর মোমেন্টাম সৃষ্টি করতে হবে, যা বৃহত্তর কল্যাণের জন্য ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিগুলো কাজে লাগাতে দরকার হবে। একইভাবে বৈশ্বিক পর্যায়ে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির সঙ্গে যুক্ত আন্তঃসীমান্ত ইস্যুগুলো বহুপক্ষীয়ভাবে অ্যাড্রেস করতে হবে।

যার অর্থ বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোকে নিজেদের নতুন   প্রযুক্তিগত উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করার জন্য একটি অ্যান্টেনার উন্নয়ন ঘটানো উচিত। এটি এরই মধ্যে পরিষ্কার যে, কর্মসংস্থান, মানব পুঁজি-সম্পদে বিনিয়োগ চাঙ্গা করার এবং নতুন ডিজিটাল অর্থনীতিতে ন্যায্য করায়ন নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত বিভ্রান্তি/ ব্যাহতকরণের সমস্যা নিরসনে অনেক কিছু অবশ্যই করতে হবে।

আমাদের বহুপক্ষীয়তাবাদের ক্ষমতাকে মোটেই অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। কয়েক দশকজুড়ে দেশগুলো বৃহত্তর জনকল্যাণ সুরক্ষা এবং সামষ্টিক সমৃদ্ধির পথ অন্বেষণে বৈশ্বিক ফোরামগুলোয় একে অন্যের কাছাকাছি আসছে, একত্রে সমবেত হচ্ছে। তথাপি বহুপক্ষীয়তাবাদের বিদ্যমান বিন্যাস বা কাঠামো পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো প্রয়োজন হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল কাজে লাগাতে আমাদের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব শক্তিশালী এবং আমাদের অর্থনীতিগুলোকে অধিক কার্যকর, দক্ষ নমনীয় করতে হবে। চলতি শতকের মাঝামাঝি নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা প্রাক্কলিত দশ বিলিয়নে পৌঁছলে বৈশ্বিক শাসন-পরিচালন ব্যবস্থা আজকের চেয়ে এমনকি আরো জটিল হবে।

নিজের দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া নতুন ডিজিটাল অর্থনীতি সামলানোর নীতিগুলোর প্রয়োজন চিহ্নিত করছে। অধিকন্তু প্রযুক্তিগত বিভ্রান্তির প্রভাব মোকাবেলা ন্যায্য করায়ন নিশ্চিতের চাবিকাঠি হবে আমাদের এজেন্ডার কেন্দ্রে মানুষকে রাখা। কর্মীদের সঠিক দক্ষতায় সজ্জিত করার বাইরে আমাদের অবশ্যই একটি ডিজিটাল জগৎ তৈরি করতে হবে, যেখানে সব মানুষ কথা বলতে পারবে এবং যেখানে পরিবর্তন থেকে যারা সুফল পাচ্ছে না, তাদের প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হবে।

ঘটনা সাধারণত যা হয়, সেটি হলো আমাদের সম্মুখীন হওয়া চ্যালেঞ্জ একদিক থেকে সুযোগও বটে। ডিজিটাল এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিগুলোর সরকারি প্রশাসন সরকারি সেবাপ্রদান ব্যবস্থা উন্নয়নে বিপুল সম্ভাবনা আছে। সরকার, ব্যবসায়িক নেতা, উদ্ভাবক, নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলো এবং নাগরিকদের যুক্ত করে নতুন ধরনের সংলাপ প্রবর্তনের এখনই সময়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাজটি পরিষ্কার। অপেক্ষা করার পরিবর্তে আমাদের অবশ্যই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ঢেউয়ে চড়তে হবে।

 

শ্রী মুল্যানি ইন্দ্রবতী: ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের উন্নয়ন কমিটির সাবেক প্রধান

ভাষান্তর: হুমায়ুন কবির

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন