খাদ্য উৎপাদনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। তবে তার সুফল ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে কি? কয়েক বছরে খাদ্যশস্য ও প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন বাড়লেও যৌক্তিক পরিমাণে তা সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে না। কিংবা দরিদ্র অনেক মানুষ পুষ্টিকর খাদ্যের ধারেকাছে ভিড়তে পারছে না। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশে ১৩ শতাংশ খানার পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। বিষয়টি পুষ্টিসহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে।
সত্য যে, কয়েক দশকে দেশে পুষ্টি সূচকের উন্নতি হয়েছে। অপুষ্টির কারণে শিশুদের যে খর্বাকৃতির সমস্যা ছিল, তা গত ২১ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৯৯৭ সালে যেখানে দেশে ৬০ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির ছিল, ২০১৮ সালে তা কমে এসে ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সংখ্যাটি এখনো অনেক বেশি। এর সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার ক্রয়ের সামর্থ্যহীনতা সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার দিক থেকে একটি বড় বাধা হিসেবেই চিহ্নিত হয়। তাই বলা যায়, পুষ্টি সূচকের উন্নতি হলেও তা অনেক ধীরগতিতেই হচ্ছে। ক্রয় সক্ষমতা না থাকায় পুষ্টিহীনতা থেকে দ্রুত বের হতে পারছে না দরিদ্র পরিবারগুলো। উপরন্তু সার্বিক সূচকের ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি ভালো হলেও বেশকিছু জেলা কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে। এসব জেলায় অপুষ্টি, শিশু মৃত্যুহার ও শিশুদের খর্বকায় পরিস্থিতির অবস্থা বেশ নাজুক। আমলে নিতে হবে অপুষ্টিজনিত ঝুঁকিতে থাকা মা ও শিশুদেরও। পুষ্টি সূচকে আঞ্চলিকভাবে যেসব জেলা পিছিয়ে রয়েছে বা দুরবস্থায় আছে, সেখানে বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি পরিবারগুলোকে আয়বর্ধক কাজে নিয়োজিতকরণের মাধ্যমে তাদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পুষ্টিহীনতার সমস্যা মোকাবেলার বিকল্প নেই। আমরা জানি, সরকার দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা (২০১৬-২৫) গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনামাফিক কাজও চলছে। এক্ষেত্রে উঁচু থেকে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত সব পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা চাই। কাজগুলো যথাযথভাবে পরিপালন হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে যাচাই করতে হবে। দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অগ্রগতির বিষয়ে রিপোর্ট করবেন। এভাবে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকেও নিয়মিত তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সমন্বিতভাবে কাজের মাধ্যমে লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয়। দেশে সবার পুষ্টিকর