হাওড়ে বাঁধ নির্মাণে এবারো বিলম্ব

ফসল রক্ষায় দ্রুত নির্মিত হোক

সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না কোনো বছরই। তার ওপর রয়েছে মানহীন কাজের অভিযোগ। যে কারণে বন্যা আসার আগেই সামান্য পানির চাপে বাঁধ ভেঙে বিস্তৃত এলাকা তলিয়ে ফসলের ক্ষতি হয়। সুনামগঞ্জের ৩৬টি বৃহৎ হাওড়সহ জেলার ১৫৪টি হাওড় রক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে এবারো লেজেগোবরে অবস্থা হওয়ার খবর জানানো হয়েছে পত্রিকার উল্লিখিত প্রতিবেদনে। নীতিমালা অনুযায়ী এবার হাওড় রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে করার কথা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন এবং ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরুর কথা ছিল। নির্ধারিত সময় পার হলেও বাঁধের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। শুধু তা- নয়, পিআইসি গঠন নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো মানসম্মতভাবে নির্মাণ না হলে আবারো বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।

নিয়মিত পরিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টিও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকাদাররা নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রেখে বিল তুলে নিয়েছেন। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় দুদক অনুসন্ধান করে সিলেট সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা, ঠিকাদার, প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিল। মামলায় পাউবোর বেশকিছু কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। দুদকের অভিযানের পর হাওড়ে বাঁধ নির্মাণে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরবে এমনটাই আশা করেছিলেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এবারো যথারীতি বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করায় গড়িমসি, বাস্তবায়ন কমিটি গঠন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ফসলসহ বৃহত্তর জনবসতি বন্যার কবল থেকে রক্ষায় বাঁধের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক সময়ে এবং মানসম্মতভাবে বাঁধগুলো নির্মাণ করা জরুরি। সুনামগঞ্জের হাওড় রক্ষা বাঁধগুলোর নির্মাণকাজ যেন দ্রুত শুরু নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি দরকার।

হাওড় অঞ্চলের ৮০ শতাংশ মানুষ বোরো ধান মাছের ওপর নির্ভরশীল। গত বছর তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের হাওড়ের শতভাগ ফসল। পাহাড়ি ঢলে ধান, মাছ দুটোই গেছে। এছাড়া অনেক ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির কারণেই এসব ক্ষতি হয়েছিল। সে সময় প্রায় দুই লাখ টন বোরো ধান নষ্ট হয়। ফলে বাজারে চালের ঘাটতি দেখা দেয় এবং চালসহ অন্যান্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যায়। নিয়মিত পরিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টিও রয়েছে। হাওড়বাসীর স্বার্থ সংরক্ষণ সেখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষার জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। পাউবোসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের সৎ নিষ্ঠাবান হওয়াটাও জরুরি। কারণ যত ভালো পরিকল্পনাই হোক, বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা যদি অসৎ হন, তাহলে তা সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে, প্রতি বছর বন্যায় বাঁধ ভেঙে কৃষকের ফসল নষ্ট হবে। সরকার এসব দিকে নজর দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

আগের দুর্যোগের বিরূপ অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া হতাশাজনক। নির্মাণকাজ বিলম্বিত হওয়ার কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হব

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন