গত মে-জুন মাসে জাসটেক্স লিমিটেড থেকে নেদারল্যান্ডসে পোশাক পণ্য রফতানি করা হয়। রফতানির পর নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণের ধারাবাহিকতায় ক্রেতাকে পণ্য রফতানি ও ব্যাংকে নথি জমার বিষয়টি ই-মেইলে নিশ্চিত করতে হয়। প্রক্রিয়ার একপর্যায়ে ক্রেতা জাসটেক্স থেকে নতুন একটি ই-মেইল পান। সেখানে জাসটেক্সের ভিন্ন ব্যাংক হিসাব নম্বর দেয়া হয়। ক্রেতা অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ই-মেইল করে। ক্রেতার পক্ষ থেকে আসা ই-মেইলটি যাচাই করতে গিয়ে জালিয়াতি করে অর্থ লোপাটের চেষ্টা ধরতে পারে জাসটেক্স কর্তৃপক্ষ।
শুধু জাসটেক্স নয়, সাম্প্রতিক সময় এ ধরনের আরো দুটি ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ সতর্কতা নোটিস জারি করেছে বিজিএমইএ।
জালিয়াতির অপচেষ্টার শিকার কারখানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো ই-মেইল। পণ্যের নকশা থেকে শুরু করে অর্থ পরিশোধ-সংক্রান্তসহ সব বিষয়ে ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ই-মেইলে। রফতানির পর অর্থ পরিশোধসংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়। সে সময় রফতানি নথি ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে জানিয়ে অর্থ পরিশোধের আহ্বান জানানো হয় ক্রেতাকে। আর ওই সময়েই জাল ই-মেইল থেকে যোগাযোগ করা হয় ক্রেতার সঙ্গে।
গত মে-জুন মাসে জাসটেক্স লিমিটেড থেকে অর্থ পরিশোধসংক্রান্ত
আলোচনার একটা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের নামে একটি জাল ই-মেইল আইডি থেকে ক্রেতাকে নতুন ব্যাংক হিসাব নম্বরে অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়। ই-মেইলের উত্তরে ক্রেতা জাসটেক্সকে একদিনের মধ্যেই ওই ব্যাংক হিসাবে অর্থ পরিশোধের কথা বলে। ক্রেতা ফিরতি ই-মেইলটি পাঠায় জাসটেক্সের প্রকৃত ই-মেইল ঠিকানায়। ক্রেতার উত্তরের ই-মেইলে যারা নিয়মিত সিসি বা অনুলিপি পান এ মেইলটি তাদের কাছে যায়নি। বিষয়টি জাসটেক্স মালিকপক্ষের নজরে এলে প্রেরক ই-মেইল ঠিকানাটি যাচাই করা হয়। তখনই জাল ই-মেইলের বিষয়টি ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাকে তা জানানো হয়।
এখন পর্যন্ত এ ধরনের তিনটি অভিযোগ এসেছে বিজিএমইএতে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নেই, কারণ জাল ই-মেইলের আইপি অ্যাড্রেস বিদেশের। অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে রফতানিকারকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।
পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সূত্র জানিয়েছে, এলসি/টিটি/সেলস কন্ট্রাক্ট—সবগুলো মাধ্যমেই জালিয়াতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্রেতা সচেতন না হলে জাল অ্যাকাউন্ট থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকও অর্থ পরিশোধ করে ফেলতে পারে। কারণ ক্রেতা ও সরবরাহকারীর ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত তথ্য যাচাই অনেক আগেই সেরে ফেলা হয়। শুধু ব্যাংক হিসাব নম্বর পরিবর্তন হলে ক্রেতার নির্দেশ পেলে ব্যাংক আর সন্দেহ করে না।
গত ১৯ নভেম্বর সদস্যদের প্রতি এ বিশেষ সতর্কীকরণ নোটিস জারি করে বিজিএমইএ।
জানতে চাইলে জাসটেক্স লিমিটেডের কর্ণধার ও বিজিএমইএ পরিচালক ইকবাল হামিদ কোরেশী বণিক বার্তাকে বলেন, ভুয়া ই-মেইল ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, আইপি অ্যাড্রেসটি যুক্তরাষ্ট্রের। ফলে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ এ মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। তাই সব সদস্যকে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সদস্য কারখানাগুলোর সবাই সংগঠনের নোটিসটি পেয়েছে। তারা এ ব্যাপারে সতর্ক আছে, এটি জানিয়েছে কিনা, সেটিও নিশ্চিত করা হয়েছে।