একের পর এক বাণিজ্য উত্তেজনা ও বৈশ্বিক উৎপাদন মন্দার কারণে এক দশকের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় ২০১৯ সাল শেষ করে ২০২০ সালে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। চলতি বছর শক্তিশালী পূর্বাভাস সত্ত্বেও প্রত্যাশার তুলনায় দুর্বল পারফরম্যান্স দেখা গেছে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিতে। খবর ব্লুমবার্গ।
বছরজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ এবং এর পাশাপাশি জার্মানির গাড়ি শিল্পে তীব্র পতনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিগুলোর প্রত্যাশার তুলনায় দুর্বল পারফরম্যান্স আকস্মিক কিছু নয়।
প্রধান অর্থনীতিগুলোয় প্রত্যাশার চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি
চলতি বছর বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য উত্তেজনা থেকে শুরু করে ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তার মতো বহু উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যার প্রভাবে প্রবৃদ্ধি চক্র প্রত্যাশার তুলনায় অনেক মন্থর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু উদ্বেগ বাস্তবে রূপ না নিলেও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধির পতন ঘটেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদহার হ্রাস
চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির কেবল নিম্নমুখী গতি একটি সম্ভাব্য মন্দার দিকেই ধাবিত করেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আবার সুদহার কর্তন ও অন্যান্য প্রণোদনা কর্মসূচির মতো পদক্ষেপের দিকেই ঝুঁকেছে। এর মধ্যে যেসব কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর সুদহার বাড়িয়েছিল, তারা আগের জায়গায় ফিরে গেছে। কিন্তু বাকি অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই মুদ্রানীতি কঠোরের পরিকল্পনা কার্যকরের আগেই সুদহার কমাতে হয়েছে।
ক্ষতির সম্মুখীন বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি
চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত,
যা বাণিজ্যে বড় ক্ষত তৈরি করেছে।
দুই বছরের দৃঢ় প্রবৃদ্ধির পর ২০১৯ সালে বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে তীব্র পতন দেখা গেছে। সিপিবি ওয়ার্ল্ড ট্রেড মনিটর
অনুসারে, গ্রীষ্ম শুরুর পর বৈশ্বিক বাণিজ্যে বছরওয়ারি সংকোচন দেখা গেছে। এছাড়া আগামী বছরও বাণিজ্য দুর্বল থাকতে পারে বলে ডিএইচএল জানিয়েছে।
এদিকে শক্তিশালী কর্মসংস্থান বাজারের সুবাদে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, চলতি বছর শেয়ারবাজারগুলো অব্যাহতভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। মার্কিন ভোক্তাদের অব্যাহত ব্যয় বিনিয়োগ দুর্বলতার ঘাটতি পূরণ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটিকে বৈশ্বিক মন্দা থেকে দূরে রাখতে পেরেছে।
মাসিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি মন্থর হলেও চলতি
বছর যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ১৯৬৯
সালের পর সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে শক্তিশালী শ্রমবাজার ক্রমান্বয়ে মজুরি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
ইউরোপের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে দুর্বল চাহিদা ও গাড়ি শিল্পের বিপর্যয়ের চাপে জার্মানি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় পুরো অঞ্চলেই পতন দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসা মনোভাবের উন্নতি ঘটলেও আগামী বছর অঞ্চলটির অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে ঝিমিয়ে পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছে।
এদিকে কিছু দিক দিয়ে ইউরোপের মতো পরিস্থিতি রয়েছে এশিয়ায়। বৈশ্বিক দুর্বলতা ও নির্দিষ্ট শিল্পকেন্দ্রিক জটিলতার সংমিশ্রণ এশিয়ার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মতো দেশগুলোর জটিলতা আরো বাড়িয়েছে সেমিকন্টাক্টার খাত। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগুলো পরিস্থিতি উন্নয়নের আভাস দিচ্ছে।
নারী-পুরুষ বৈষম্য হ্রাসে ধীরগতি
চলতি বছর বিশ্বজুড়ে নারী ও পুরুষের ব্যবধান কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়তে দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে নারী-পুরুষের ব্যবধান দূর করতে বিশ্বের আরো এক শতাব্দী লাগবে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরম।
চলতি বছরের নানা উত্থান-পতনের পর আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল হতে পারে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে বড় আকারে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন তারা।