মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলন বিশ্ববাসীকে কী দিল?

ম. ইনামুল হক

মাদ্রিদে -১৫ ডিসেম্বর শেষ হওয়া দীর্ঘতম কপ২৫ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন বলতে গেলে কিছুই দিল না। কারণ কার্বনের বাজার নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়টি এক বছর পেছানো হয়েছে। কার্বন বাণিজ্য বাজারনীতিতে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ কম নিঃসরণকারী দেশ থেকে কার্বন নিঃসরণ ক্রয় করতে পারবে। প্রায় ২০০ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা নীতিগতভাবে সম্মত হন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব গরিব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের সাহায্য দেয়া হবে। কিন্তু নতুন কোনো অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি নেই। চূড়ান্ত দলিলে তারা ২০১৫ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। ২৫টি দফায় দীর্ঘ শীর্ষ সম্মেলনে বরং অনেক প্রতিনিধি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছেন। প্যারিস চুক্তি বর্তমান শতাব্দী শেষে বায়ুমণ্ডলে দশমিক ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, যেখানে - ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা আছে; এবং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সমুদ্রতল উঁচু হয়ে যাওয়া, ভয়ানকতর ঝড়ো আবহাওয়া ইত্যাদির সম্ভাবনা আছে। তবে কার্বন বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস হতাশা প্রকাশ করেছেন। 

গত ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর প্যারিসে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কনফারেন্স বা Conference of the Parties 21 (COP 21) অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সের উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ বিষয়ক বিশ্বের সব দেশের ওপর প্রয়োগযোগ্য বা আইনতভাবে বাধ্য করার মতো একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে উপনীত হওয়া। ১৯৯৭ সালে জাপানের কিয়োটোতে অনুষ্ঠিত কপ৩-এর পর থেকে প্রচেষ্টা চলে আসছে। উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর ২০১৩ ওয়ারসোতে অনুষ্ঠিত ১৯তম Conference of the Parties সভায় একটি চুক্তির খসড়া হয়, যা ডিসেম্বর ২০১৫ প্যারিসে ২১তম কপ কনফারেন্সে সব দেশের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বাক্ষর করা হয়। ওই সমঝোতাপত্রের নং ধারায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমানোর বিষয়টি প্রতিটি দেশের intended nationally determined contributions (INDC) হিসেবে গণ্য করে বাধ্যবাধকতামূলক আর রাখা হয়নি। তাই এর নং ধারায় প্রতিটি দেশের INDC সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে, এবং এর ১৩ নং ধারায় প্যারিস কনফারেন্সের আগেই যাতে তা পাওয়া যায় (বাধ্যতামূলক নয়), সে কথাই কেবল বলা হয়েছে। 

গত ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাতাসে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ রোধে এক বিশেষ চুক্তিতে উপনীত হয়। বলা হয়, এর অন্তর্ভুক্ত ২৮টি দেশ ২০৩০ সাল নাগাদ ১৯৯০ সালের মাত্রা থেকে ৪০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে দেবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আগে ২০২০ সাল নাগাদ ২০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর চুক্তি করে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে একক সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ চীন বলছে, ২০৩০ নাগাদ তাদের দেশের গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে, তারপর কমবে। বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৫ নাগাদ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা ২৮ শতাংশ কমানোর কথা ভাবছে। তৃতীয় দেশ ভারত তার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চায়; তবু তারা বিনা বাধ্যতায় সমঝোতার কথা বলছে। চতুর্থ দেশ রাশিয়া ধরনের উদ্যোগকে অগ্রাহ্য করছে। অস্ট্রেলিয়া গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রার বিষয়টি আর গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে না। পরিস্থিতিতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমানোর লক্ষ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিশ্বের অন্য দেশগুলোর ভিন্নপথে হাঁটার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

মাদ্রিদে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের শীর্ষ সম্মেলন হলো, তখন গ্রেটা থুনবার্গ নামের এক তরুণীর আন্দোলন সারা বিশ্বের সব মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার আন্দোলন তাকে নিয়ে যতটা নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণ করেছে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আজকের যে জলবায়ু পরিবর্তন বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, গ্রেটা থুনবার্গের মতে কাজ বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা করেনি, করেছে বর্তমান সময়ের বয়ঃপ্রাপ্তরা। তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের কথা ভাবেনি। তারা পুঁজিবাদী

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন