রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম, মন্ত্রীর দুঃখপ্রকাশ

বণিক বার্তা অনলাইন

রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চলে আসায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার নামটা যদি আজকে তালিকায় (রাজাকারের) আসতো। আমি যে কষ্ট পেতাম, তারাও সে কষ্ট পেয়েছেন; যারা প্রকৃতপক্ষে রাজাকার ছিলেন না। আমি সেজন্য আন্তরিকভাবে ‍দুঃখিত।’

যে নামগুলো ভুলভাবে এসেছে তা সংশোধন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অন্যায়ভাবে যদি নাম আসে, তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তা সংশোধন করা হবে।’

আজ মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে উৎসর্গকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম খান রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে গত রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকার প্রথম কিস্তি প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেসময় তিনি জানান, যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে আরো তালিকা প্রকাশ করা হবে।

সেই তালিকায় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম চলে আসায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী সনদ ও নিয়মিত ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেও তার নামও দেখা যায় তালিকায়। তার কন্যা বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী এ পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘এ তালিকা শুধু মুক্তিযোদ্ধাকে নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও অপমাণিত করেছে।’

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে; যিনি নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, এ তালিকা আমরা প্রণয়ন করিনি; প্রকাশ করেছি। যা আমরা পেয়েছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে, হুবহু; দাড়ি, কমা, সেমিকোলন কোথাও কোন পরিবর্তন করিনি, যা আছে তাই প্রকাশ করেছি। আমি গতকাল রাতে এসব খবর (তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম) পেয়েছি। আজকে গিয়ে এটা দেখবো। আমি যতটুকু জানি, তারাও (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়) কোন জায়গায় হাত দেয়নি। যেভাবে আগে মন্ত্রণালয়ে রক্ষিত ছিল, একাত্তর সালের যে ডকুমেন্টগুলো রক্ষিত ছিল, সেগুলোই ওনারা আমাদের দিয়েছেন এবং আমরা সেটা প্রকাশ করেছি।’

মন্ত্রী বলেন, আমার ধারণা যারা এই তালিকাটি করেছিলেন সেসময় এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে নামগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। এসময় অনেকের নাম এসে থাকতে পারে, তারা হয়তো তা জানতেও পারেননি।

যারা এই তালিকায় মর্মাহত হয়েছেন তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, এটা একদিক থেকে ভালো হয়েছে। কারণ এখন প্রকাশ না হয়ে আজ থেকে ২০ বছর বা ৩০ বছর পর প্রকাশ পেলে সেটা সংশোধন করা যেতো না। কারণ তখন সমসাময়িক লোক কেউ তেমন জীবিত থাকবেন না। পরে অনেক তরুণরাই এটা মুখে বললে মানতে চাইতেন না। এখন অনেক সমসাময়িক লোক আছেন যারা বলতে পারেন, ইনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তাই আমি মনে করি, তারা আহত হলেও, কষ্ট পেলেও একটা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।’ 

মন্ত্রী বলেন, ‘ভুলের দায় আমরা এড়াতে পারি না। যেসব অভিযোগ পাবো, যাচাই করে সেসব নাম প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। আগামীতে তালিকা প্রকাশের আগে যাচাই-বাছাই করে পরে প্রকাশ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন