বগুড়ায় নিরাপদ সবজি আন্দোলন

সাইদ শাহীন

বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার ব্রি কুষ্টিয়া গ্রামের কৃষক মো. আবদুল মান্নান। আগে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে বেড়ে যেত উৎপাদন খরচ। আবার প্রথাগত সবজি আবাদ করে মুনাফা পেতেন কম। তাই তিন বছর আগে শুরু করেন নিরাপদ সবজির আবাদ। মাত্র ৩৩ শতক জমিতে আবাদ শুরু করলেও এখন তা নিয়ে গেছেন প্রায় ১০০ শতকে। দেশীয় সবজির পাশাপাশি তিনি ওয়েস্টার্ন দামি সবজি বিশেষ করে ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, লেটুস বিটজাতীয় সবজি উৎপাদন করছেন। ভালো মুনাফা পাওয়ার কারণে আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি।

বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান ৫০ শতক জমিতে নিরাপদ সবজি আবাদ শুরু করেন। চলতি বছর প্রায় ১২০ শতক জমিতে তিনি সবজির আবাদ করেছেন। আজিজার রহমান কিংবা আবদুল মান্নানের মতো বগুড়ার প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক এখন নিরাপদ সবজি আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। উৎপাদিত এসব সবজি বিপণন করছেন আলাদাভাবে। চারটি আউটলেট এবং বগুড়ার সুপারশপগুলোতে শোভা পাচ্ছে তাদের উৎপাদিত সবজি। এসব সবজি বগুড়ার মানুষের মন জয় করেছে। তারা চাইছে রাজধানীর বাজারগুলোতে তাদের সবজির বিপণন বাড়াতে।


আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (আইএফএডি) অর্থায়নে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) নিরাপদ সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে কাজ শুরু করে। প্রমোটিং এগ্রিকালচারাল কমার্শিয়ালাইজেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজেস (পিএসিই) প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ব্যবসাগুচ্ছের ওপর ভ্যালু চেইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পিকেএসএফ। তবে উৎপাদিত সবজিকে নিরাপদ পদ্ধতিতে উৎপাদন বাজারজাতকরণের ওপর একটি প্রকল্প ২০১৭ সাল থেকে তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বগুড়া জেলার সদর শাজাহানপুর উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার সবজি চাষীর মধ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাস্তবায়নে স্থানীয় সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)

জানা গেছে, বগুড়া অঞ্চলে আগে বাজারজাতকরণ বিষয়ক, বিশেষ করে নিরাপদ সবজির সরবরাহ ছিল না। বাজারে সাধারণ বিষযুক্ত সবজি বিক্রি হতো। নিরাপদ সবজির বিশ্বাসযোগ্যতার কোনো প্রমাণ ছিল না। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন ফেরোমন ফাঁদ, কেঁচো সার, ট্রাইকো-কম্পোস্ট, হলুদ আঠালো পেপার, লাইট ট্র্যাপ ইত্যাদি পাওয়া যেত না। কিন্তু সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শুরু করার পর তিন হাজার জনের অধিক সবজি চাষী নিয়মিত নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছে। কৃষকরা মাটি পরীক্ষা করছেন এবং পরামর্শ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করছেন। সার কীটনাশকের ক্ষেত্রে তারা জৈব উপাদানকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রয়োজন না হলে তারা রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করেন না।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন