একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রকাশ করেছে
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি
পর্যালোচনা করে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
রাজাকারদের তালিকা
প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম
মোজাম্মেল হক বলেন, যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে
আরো তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, রাজাকারদের এ তালিকা নতুন কোনো তালিকা নয়। যারা ১৯৭১
সালে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার
কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিল ও যেসব পুরনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল, সেটুকু প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এটি এখনো পরিপূর্ণ নয়।
এছাড়া যেসব দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যাবে, শুধু সেটুকু প্রকাশ করা হবে। কোনো তালিকা শতভাগ
নিশ্চিত না হয়ে প্রকাশ করা হবে না। অন্যায়ভাবে কেউ তালিকাভুক্ত হবে না। তালিকায়
থাকা ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগামীতে এটি করা যাবে।
জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে রেকর্ডরুমের পুরনো নথি চাওয়া হয়েছে জানিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের কোনো তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়নি। শুধু রেকর্ড রুমে থাকা নথি পাঠাতে বলা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে যেসব রেকর্ড পাওয়া যাবে, সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৭১ সালে যত গেজেট হয়েছিল, সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ১৯৭১ সালে একটি
তথাকথিত উপনির্বাচন হয়েছিল। সে নির্বাচনে কারা বিজয়ী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে সে তালিকা চাওয়া হয়েছে। কমিশন
এখনো সেটি সরবরাহ করতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে এক
প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমি জাতির কাছে ওয়াদা করেছিলাম রাজাকারদের তালিকা জনসম্মুখে
প্রকাশ করব। আমি তা শুরু করলাম মাত্র। এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে কিনা সেটি
সরকারের বিষয়। কারণ গেজেট প্রকাশ হতে হলে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন লাগে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক
মন্ত্রণালয় এককভাবে গেজেট প্রকাশ করতে পারবে না। মামলা ও তালিকা প্রকাশ এক বিষয়
নয়। যদি কেউ বাদী হয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেন, তবে মামলা হবে। এ তালিকা করা হয়েছে, কারণ ৭১ সালে কার কী ভূমিকা ছিল, জাতির তা জানা প্রয়োজন।
অন্য এক প্রশ্নের
উত্তরে তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর
রহমানের নাম এ তালিকায় নেই। কারণ তারা রাজাকার, আলশামসের চেয়েও উচ্চপর্যায়ের স্বাধীনতাবিরোধী নেতা
ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই শ্রেণীর মানুষ ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। এক শ্রেণী
ছিলেন যাদের পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে সেখানে আটকে রেখেছিল। আরেক শ্রেণী ছিলেন
যারা নিজেদের সুখ-শান্তি ও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়া তাদেরই একজন। এ শ্রেণীর মানুষদের আমরা স্বাধীনতাবিরোধী বলে অভিহিত
করব।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বর্তমান তথ্যমতে কোনো কোনো তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৬ জন। এর মধ্যে দাবিদার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৫১ হাজার ২৮৫। বর্তমানে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ১ হাজার ৪৬১ জন। কিন্তু এই ২ লাখ ৫১ হাজার ২৮৫ সংখ্যক তালিকার অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম একাধিক গেজেট বা দলিলে থাকায় বেশি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।