নির্মাণ মৌসুমেও স্থবির ঢেউটিনের বাজার

টনপ্রতি দাম কমেছে ২-৩ হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

শুষ্ক মৌসুমে বাড়িঘর নির্মাণ হওয়ায় প্রতি বছর এ সময় ঢেউটিনের চাহিদা থাকে বেশি। বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢেউটিনের বাজার থাকে ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সরবরাহের তুলনায় চাহিদা না থাকায় এবং চলতি মৌসুমে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় পণ্যটির বাজার নিম্নমুখী রয়েছে। এতে গত এক মাসে পাইকারি বাজারে ঢেউটিনের দাম না বেড়ে টনপ্রতি কমপক্ষে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কমেছে।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, এজেন্ট ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ ছয় মাস বাড়িঘর নির্মাণকাজ হয় বেশি। এর মধ্যে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিএ তিন মাসে চাহিদা বেশি থাকায় নির্মাণ সামগ্রীর দাম থাকে সর্বোচ্চ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এ চিত্র উল্টো। শুষ্ক মৌসুমে দুই-তিন মাস পার হলেও টিনের বাজার এখনো স্থবির। এমনকি গত দুই মাসের ব্যবধানে টনপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কমেছে টিনের দাম। গ্রাহক পর্যায়ে চাহিদা বাড়লেও কারখানাগুলোতে টিনের বাড়তি মজুদ থাকায় দাম কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢেউটিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, শুষ্ক মৌসুমকে লক্ষ্য করে প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেউটিন উৎপাদন করে। কিন্তু মৌসুমে উৎপাদন অনুযায়ী বিক্রি না থাকায় পণ্যের দাম কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাধারণত দুই ক্যাটাগরিতে ঢেউটিন বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে একটি হলো ওজন হিসেবে। অর্থাৎ কেজি হিসেবে (এক হাজার কেজিতে এক টন) ও নির্দিষ্ট পিস হিসেবে টন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে বিভিন্ন মানের ঢেউটিন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮৫ হাজার টাকায়। চট্টগ্রামে অবস্থিত টিন উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর গেটে বর্তমানে ভালো মানের (প্রাইম কোয়ালিটি) ৩২ এমএম (মোটা টিনপ্রতি টন (২২৪ পিস) ঢেউটিন বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার টাকায়। ৩২ এমএম প্রতি টন (২২৪ পিস) রঙিন ঢেউটিন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ হাজার টাকা দরে। ৪২ এমএম প্রতিটন (১৭৫ পিস) টিন বিক্রি হচ্ছে ৭৭ হাজার ৩০০ টাকায়। প্রাইম কোয়ালিটির প্রতি টন (২৮২ পিস) পাতলা ঢেউটিন বিক্রি হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা দরে।  ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই-তিন মাস আগে বর্তমান দরের চেয়ে টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হতো এসব কোয়ালিটির ঢেউটিন।

এদিকে ওজন হিসেবে বিক্রি হওয়া ঢেউটিনের মধ্যে প্রতি টন (এক হাজার কেজি) বিআরও ক্লাসের ঢেউটিন বিক্রি হচ্ছে ৮২ হাজার টাকা দামে। বি-ক্লাসের টিন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ হাজার টাকায় এবং সি ক্লাস টিন বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা দামে। একই মানের প্রতি টন ঢেউটিন গত দুই মাস আগে কমপক্ষে আরো ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন জানান, মিল গেটে দাম কমার প্রভাবে পাইকারিতেও প্রতি টন টিনের দাম কমপক্ষে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। বাজারে টিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সেই পরিমাণে বিক্রি নেই। ফলে টিনের বাজার নিম্নমুখী বলে জাানিয়েছেন এ ব্যবসায়ী।

টিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এনজিএস গ্রুপের বিপণন কর্মকর্তা দীপক তালুকদার বলেন, বছরব্যাপী কারখানাগুলোতে টিন উৎপাদন হলেও তা বিক্রি হয় মূলত শুষ্ক মৌসুমে। তাই বছরের বেশির ভাগ সময় বাজার নিম্নমুখী থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে এসে টিনের দাম বাড়ে। কিন্তু চলতি মৌসুমের শুরু থেকে নির্মাণ পণ্যটির দাম না বেড়ে বরং কমেছে। মিলগুলোতে পর্যাপ্ত টিন মজুদ থাকলেও সেই পরিমাণে বিক্রি না হওয়ায় পণ্যটির দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

জানা যায়, চট্টগ্রামের টিনের বাজারে টিকে, এস আলম (মোরগ মার্কা), আবুল খায়ের (গরু মার্কা), চেমন ইস্পাত, পিএইচপি (অ্যারাবিয়ান হর্স), এনজিএস (লাড্ডু মার্কা) ও কেডিএসের (কেওয়াই ব্র্যান্ড) ঢেউটিনের চাহিদা বেশি। গত এক মাসে বাজারে এসব ব্র্যান্ডের টিনের দাম দুই দফায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন