সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ৫৬% গ্রাজুয়েট

নিহাল হাসনাইন

চলতি বছরের এপ্রিলে ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকায় হামলাকারীদের অধিকাংশই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। বাংলাদেশে ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন কয়েকজন শিক্ষিত তরুণ। শুধু এরাই নয়, দেশে জঙ্গি সন্দেহভাজনদের ৫৬ শতাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (গ্রাজুয়েট) সম্পন্ন করা। এমনটাই বলছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ২০১৬ সাল থেকে জঙ্গি সন্দেহভাজন হিসেবে আটকদের নিয়ে করা এক গবেষণার ভিত্তিতে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলন ২০১৯-এর সমাপনী দিনে এ তথ্য উপস্থাপন করেন সিটিটিসির ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ), ইউএসএইড ও জাতিসংঘ।

চরমপন্থা প্রতিরোধ কৌশল (Countering Violent Extremism-CVE) শিরোনামে সাইফুল ইসলামের এ উপস্থাপনায় দেশে উগ্রবাদ ও জঙ্গি কার্যক্রমের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে উগ্রবাদ নির্মূলে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথাও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়া এ শিক্ষিতরা দেশের বেশিরভাগই পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। অনেকে ইংরেজি মাধ্যমেও পড়েছেন।

গবেষণা উপস্থাপনায় সাইফুল ইসলাম আরো জানান, সিটিটিসি ইউনিটের গবেষণায় দেখা গেছে, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদে জড়িতদের ৮২ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। 

তবে দেশে জঙ্গি কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ‘দাওয়া ইলাল্লাহ’ নামে একটি উগ্রবাদী ফোরামের সদস্য ছিল ৫৫০ জন। বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা ৩ হাজারেরও বেশি। সংখ্যায় বৃদ্ধি পেলেও দেশের জঙ্গি কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে কমেছে। ২০১৬ সালের তুলনায় জঙ্গি কার্যক্রম কমেছে ৯০ শতাংশ।

উগ্রবাদ ও চরমপন্থার বিস্তার রোধে কৌশলও তুলে ধরা হয় উপস্থাপনায়। সাইফুল ইসলাম বলেন, চরমপন্থা প্রতিরোধ কৌশল চারটি ধাপে ভাগ করা যায়। প্রথম ধাপে উগ্রবাদ বিস্তার প্রতিরোধ (Preventing Radicalization), দ্বিতীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো (Countering Radicalization), তৃতীয় ধাপে উগ্রবাদ থেকে ফিরিয়ে আনা (Deradicalization) ও চতুর্থ ধাপে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো (Counter Terrorism)। এজন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। 

চার ধাপে প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথম ধাপে উগ্রবাদ প্রতিরোধের জন্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এছাড়া পারিবারিক বন্ধন বাড়াতে হবে, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক সম্পর্ক শক্তিশালী করা প্রভৃতি উদ্যোগ নিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপে উগ্রবাদের দিকে যারা ঝুঁকে পড়েছেন তাদের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। অনলাইন ও অফলাইনে তাদের চিহ্নিত করতে হবে, উগ্রবাদের চিহ্নগুলোকে শনাক্ত করতে হবে, কমিউনিটি ভিত্তিক আইন প্রয়োগ করতে হবে, সাইবার জগত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে প্রভৃতি। 

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন