উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলন

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার আগে সত্যতা যাচাই করুন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বণিক বার্তা অনলাইন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন কিছু শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা জিনিস শেয়ার (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) করার আগে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন, সত্যতা যাচাই করুন।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলন ২০১৯-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ), ইউএসএইড ও জাতিসংঘ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল। কারণ আমরা ‘অল আউট’ নীতিতে কাজ করেছি।’ এসময় বাংলাদেশের পুলিশকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের তৎপরতার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ করে দেখলাম, টার্গেট কিলিং শুরু হলো। ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যার মধ্যদিয়ে এর শুরু। এরপর পর্যায়ক্রমে বেশ কজন বিদেশীকে হত্যা করা হলো। গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিভিন্ন দেশের নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করা হলো। এরপর প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কাজ শুরু হলো।’

মাদরাসা কখনো জঙ্গি তৈরি করে না উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। সকল ধর্মেই শান্তির কথা বলা আছে। আমরা সকল ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসলাম। অভূতপূর্ব সাড়াও পেলাম। এটাই ছিলো আমাদের ম্যাকানিজম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একের পর এক চ্যালেঞ্জ নিলেন এবং দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনলেন। এই কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য শহীদ হয়েছেন।’

এসময় তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ছেলে মেয়েদের দিকে খেয়াল রাখুন। তাদের সময় দিন।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘অবাধ তথ্য প্রযুক্তির সহজ ব্যবহারে উগ্রবাদও বিস্তার লাভ করছে সকল দেশে। অশিক্ষা ও দারিদ্র্য সহিংসতা-উগ্রবাদের নিয়ামক। উগ্রবাদের মতো একটি বিকৃত আদর্শ দমনের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। আমরা যদি ধরে নেই উগ্রবাদ দমন শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব, তবে সেটা হবে ভুল। সকলে মিলে কাজ করতে হবে।’ 

পুলিশ প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের জঙ্গি দমন বিষয়টি বিভিন্ন ইন্টারন্যশনাল ফোরামে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে। আমাদের জঙ্গি দমনের যে সাফল্য তা কিন্তু খুব সহজে আসেনি, আনেকের জীবন দিতে হয়েছে এই অর্জনের জন্য।’ 

ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রয়োজন পিচফুল সোসাইটি। আর এর জন্য আমাদের সাসটেইনেবল পুলিশিং এর মাধ্যমে পিচফুল সোসাইটি দিতে পারবো। সাসটেনেবল পুলিশিং করতে হবে, আমরা সেই চেষ্টায় করে যাচ্ছি।’

কারাগারে আটক থাকা জঙ্গি ও উগ্রবাদীদের স্বাভাবিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য এনজিওগুলোর কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘যারা সাজা খেটে বেড়িয়ে আসছে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে, যাতে তাদের মূল সমাজে ফিরে আসতে পারেন। ‘ডিরেডিকালাইজের’ কাজটি সব চেয়ে ভালো করতে পারেন ধর্মীয় নেতারা, এলাকার মুরব্বিরা। তাদের নিয়েও আমরা বসেছি, মসজিদের ইমামদের নিয়েও আমরা বসেছি, ওনারা কাজ করছেন। বয়ানের মাধ্যেমে বিকৃত এই পথে যাওয়া থেকে অনেকেই বিরত হচ্ছেন।’

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসিইউ) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান হামলার পরে আমরা যে সফলতা দেখিয়েছি তা প্রসংশার দাবি রাখে। আমরা সামনে থেকে কাজ করলেও পেছন থেকে সার্বিক সহযোগিতা এবং উৎসাহ প্রদান করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ এখানে অংশ নেয়া অতিথিরা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য অভিন্ন, দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখা। তবে এর স্থায়ী সমাধানের জন্য এই বীজ দূর করতে হবে। আমরা আগামী দিনেও যদি এই কাজ করে যেতে পারি তাহলে আশাকরি কেউ আর এই উগ্রবাদে জড়াবেন না।’

সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন