নায়াগ্রা জলপ্রপাত

কী ঘটে যখন জমে যায় এ জলদানব!

ইয়াজিম পলাশ

নায়াগ্রা নামটি এসেছে নায়া-গারা থেকে। নায়া-গারার অর্থ দেবতার গর্জন। তিনটি পাশাপাশি অবস্থিত ভিন্ন জলপ্রপাত নিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাত গঠিত। জলপ্রপাত তিনটির নাম হর্সশু বা কানাডা ফলস, আমেরিকান ফলস ও ব্রাইডাল ভিল ফলস। নায়াগ্রা জলপ্রপাত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এতে প্রায় ১৬৭ ফুট ওপর থেকে পানি পড়ে প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিয়ন গ্যালন।

গোট আইলান্ডে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মুখোমুখি দাঁড়ালে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে জলপ্রপাতের দিকে। মনে হবে বিস্ময় আমাকে গ্রাস করছে। যেন প্রকৃতির ভয়ংকর সুন্দররূপ দেখছি।

এটা তো নায়াগ্রা জলপ্রপাতের স্বাভাবিক সৌন্দর্য। কিন্তু এ বিশাল জলরাশির জলপ্রপাতকে হঠাৎ থমকে ও পুরোপুরি নিশ্চল হয়ে যেতে দেখলে কেমন হবে সে সময়টা? রূপকথার জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বরফে পরিণত হলো পুরো জলপ্রপাতটি, তখন কেমন দেখাবে দৃশ্যটা? তখন দৃশ্যটা জাগতিক কোনো দৃশ্য বলে মনে হবে না। মনে হবে অন্য কোনো ভুবনের দৃশ্য। এটা কল্পনার কথা বলছি না। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে আসলেই কি নায়াগ্রা জলপ্রপাত বরফে পরিণত হতে পারে? উত্তরটা হলো, হ্যাঁ।

ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, নায়াগ্রা জলপ্রপাত হিমায়িত হওয়া অস্বাভাবিক না। সাধারণত জানুয়ারিতে এর গড় তাপমাত্রা থাকে ১৬ ও ৩২ ডিগ্রি। শীতকালে তাপমাত্রা যখন হিমাঙ্কের ৮ থেকে ১৬ ডিগ্রি নিচে নেমে যায়, তখন মারাত্মক ঠাণ্ডায় কাঁপতে থাকে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। কানাডার কোথাও কোথাও তাপমাত্রা নেমে যায় দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রার কাছাকাছি। তখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উৎস নায়াগ্রা জলপ্রপাত মারাত্মক ঠাণ্ডায় জমে যায়।

অর্থাৎ গভীর গর্জন সত্ত্বেও শীতকালে অবস্থার ওপর নির্ভর করে নায়াগ্রা জলপ্রপাত বরফে পরিণত হতে পারে। মাঝে মধ্যে এতেআইস ব্রিজও তৈরি হয়। বেশ কয়েকবার জমে গিয়েছিল নায়াগ্রা জলপ্রপাত। পোলার ভার্টেক্স বা মেরুপ্রবণ ঘূর্ণাবর্তের দরুণ ২০১৪ সালে নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি আংশিকভাবে হিমায়িত হয়ে নিথর হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ১৮৪৮ সালের মার্চে বরফের কারণে নায়াগ্রা জলপ্রপাত বন্ধ হয়ে যায় এবং ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো পানি পড়েনি। ফলে জলবিদ্যুৎ কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাই বিদ্যুতের অভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া ১৯১১, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে নায়াগ্রা জলপ্রপাত নিশ্চল হয়ে গিয়েছিল।

যখন নায়াগ্রা জলপ্রপাত জমে নিশ্চল হয়ে যায়, তখন কিছুটা হলেও ভৌতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। শীতে বরফ জমার ফলে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় দেখা যায় অন্য রকম দৃশ্য। জলপ্রপাতের আশপাশে যে গাছগুলো ঘন পাতায় আবৃত থাকে, সে গাছগুলোর পাতা সাদা ধবধবে তুষারের পাতায় পরিণত হয়। জলপ্রপাতের আশপাশের পাথর, দেয়াল আর রেলিংগুলোয় চুইয়ে পড়া পানি জমে শক্ত হয়ে যায়। দেখে মনে হবে যেন এটা স্বচ্ছ কোনো কাচের কারুকার্য।

জলপ্রপাত দিয়ে বয়ে যাওয়া পানিও ঠিক যেন বরফে পরিণত হয়। তখন দেখে মনে হয় এ যেন বরফের কোনো রাজ্য। আবার মাঝে মধ্যে মনে হবে জলপ্রপাত দিয়ে বয়ে যাওয়া পানিও যেন ঠিক বরফ নয়, আবার একেবারে তরলও নয়। ঘন কুয়াশার আড়ালে এ পানির প্রবাহটাও তৈরি করে এক অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের। রাতে চাঁদের আলো পড়ে এতে অলৌকিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। যেন চারদিকে হীরার আলো ছড়িয়ে আছে, বরফখণ্ডগুলো মনে হয় একেকটি হীরকখণ্ড। সব মিলিয়ে নায়াগ্রা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক, জাদুকর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক প্রতীক। এর মোহময় আকর্ষণকে কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন