সম্প্রতি অমানবিক ও নিষ্ঠুর
নির্যাতনের ফলে সৌদি আরবে গৃহশ্রমিক হিসেবে কর্মরত মানিকগঞ্জের নাজমা বেগমের
মৃত্যুর ঘটনায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহশ্রমিক হিসেবে কর্মরত
নারী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়গুলো আবারো আলোচনার ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত
হচ্ছে। অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংগঠনসহ বিভিন্ন অধিকার সংগঠন
এবং সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ ও হতাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক
সংগঠন ও অ্যাক্টিভিস্টদের উদ্যোগে গঠিত
‘প্রবাসী নারী শ্রমিকের পাশে বাংলাদেশ’-এর
ব্যানারে গত ১২ নভেম্বর সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারী গৃহকর্মী ও
শ্রমিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভসহ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
মন্ত্রণালয়ে ১৩ দফা দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি উঠে
এসেছে। কয়েকজন সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করার দাবিও
করা হয়েছে।
এবার নাজমার কাহিনীতে ফিরে আসি।
হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে সৌদি আরব গেলেও তার
কাজ মেলে গৃহকর্মীর, যেখানে শুরু থেকেই যৌন নির্যাতনসহ শারীরিক, মানসিক
বিভিন্ন নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে তাকে। মৃত্যুর কয়েক দিন আগেও নির্যাতনের কারণে
দেশে ফেরত আসার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন স্বজনদের। কিন্তু জীবন নিয়ে নয়, মরদেহ
হিসেবে মৃত্যুর ১ মাস ২৪ দিন পর দেশে আসেন নাজমা বেগম। নাজমা বেগমের ঘটনা
বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। নাজমা বেগমের পর ফেসবুকে সুমি নামের একজন অভিবাসী নারী
গৃহকর্মীর দেশে ফেরত আসার আকুতির বর্ণনা ভাইরাল হয়েছে। এর আগেও অনেক নারী শ্রমিক
নির্যাতনের শিকার হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত এসেছেন। মূলত কাজের
নিরাপদ পরিবেশ না থাকায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় প্রতি
মাসেই নারী গৃহকর্মীরা ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে
বিদেশে যাওয়া নারীদের প্রায় ৮০ শতাংশের গন্তব্য সৌদি আরব এবং সেখানকার বাংলাদেশ
দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের তথ্যানুযায়ী,
গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত
দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ২২২ নারী গৃহকর্মী।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান
ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ১৯৯১ সালে ২ হাজার ১৮৯ নারী কর্মীর মাধ্যমে বিদেশে নারীদের কর্মসংস্থান
শুরু হয়। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৭৪০ জন নারী
অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী গেছেন সৌদি
আরবে, যা মোট অভিবাসী নারীর ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সুনির্দিষ্টভাবে মধ্যপ্রাচ্যে নারী
শ্রমিক প্রেরণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক প্রেরণ
প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে নারীদের বিস্তারিত তথ্য জানা, কর্মঘণ্টা, কর্মপরিবেশ, বেতন-ভাতা, অবসর
ও বিশ্রামের সুযোগ, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়গুলো। এখানে মনে রাখার বিষয় হলো
দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে নারীদের পাঠানো হয়, যেখানে
অভিবাসনসংক্রান্ত বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তির ভূমিকা নেই বললেই চলে।
কর্মসংস্থান চুক্তি সম্পাদিত হয় নিয়োগকারী ব্যক্তি ও অভিবাসী কর্মীর মধ্যে এবং
চুক্তিতে দুই দেশেরই রিক্রুটিং এজেন্সির স্বাক্ষর থাকলেও বরাবরই রিক্রুটিং
এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে সব দায় নারী শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
তাছাড়া যেহেতু স্পন্সরশিপ ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত এ প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণসহ
কর্মীর সব খরচ বহন করেন নিয়োগকারী ব্যক্তি,
তাই গৃহকর্মীর সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করা
হয়।
ব্যতিক্রম কিছু রয়েছে, তবে
মোটা দাগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেশে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়
না। তাছাড়া অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে বিরতিহীনভাবে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করানো, বেতন
সময়মতো পরিশোধ না করা, দীর্ঘ সময় খেতে না দেয়া,
অবসর-বিনোদন-ছুটির ব্যবস্থা না করা,
নিরাপত্তাহীনতা, শারীরিক-মানসিক
নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি। এসব নারী শ্রমিক যখন দেশে ফিরে আসেন, পরিবার
ও সমাজও তাদের সহজভাবে গ্রহণ করে না। অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন সংগঠনগুলোর মতে, সৌদিতে
নারী কর্মী পাঠানোর আগে এক মাসের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকলেও তা মানা হয় না, তাছাড়া
ভাষার সমস্যাও রয়েছে। অন্যদিকে আমরা জানি,
মূলত দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীরাই একটু উন্নত
জীবনের স্বপ্নে বিদেশে যেতে বাধ্য হন। এ দরিদ্র ও অল্পশিক্ষিত একজন নারীর পক্ষে এক
মাসের প্রশিক্ষণে নির্দিষ্ট পেশাভিত্তিক দক্ষতার পাশাপাশি নতুন ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-রীতির সঙ্গে
খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো দক্ষতা অর্জন কি সম্ভব?
এ বাস্তবতায় নারীদের লক্ষ্য করে এক
ধরনের দোষারোপের প্রবণতা দেখা যায়,
যা খুবই দুঃখজনক। বিশেষ করে রিক্রুটিং এজেন্সি ও
সরকারের তরফ থেকে যখন বলা হয় যে নারীরা ভাষা বুঝতে পারেন না, সংস্কৃতির
সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না বলে চলে আসতে চান। এ দোষারোপের প্রবণতা নারীদের কেবল
ছোটই করে না, তাদের প্রতি অবহেলার দৃষ্টান্ত তৈরি করে এবং পাল্টা প্রশ্নের ক্ষেত্র
তৈরি হয়—শুধু ধর্মীয় আনুগত্যের মিল ছাড়া সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে
অভিযোজনের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ করা হয় কিনা? কর্মসংস্থানের
চুক্তি কি তাদের জন্য বোধগম্য ভাষায় করা হয়?
পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে কর্মসংস্থান চুক্তি কি
অভিবাসী কর্মীর হাতে দেয়া হয়?
কর্মসংস্থানের যাবতীয় শর্তাবলি জেনে কি নারীরা
বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?
প্রেরণকারী রাষ্ট্র হিসেবে নিজের দেশের
নাগরিকদের দেখভালের দায়িত্ব কি দূতাবাসগুলো ঠিকমতো পালন করতে পারে? যেখানে
স্পন্সরশিপের মাধ্যমে গৃহশ্রমিকদের প্রেরণ করা হয়, অভিবাসী নারীদের নিজেদের দিক থেকে
টাকা খরচের বিষয় না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই দালালদের টাকা দিতে হয়, যা
কখনো কখনো লাখের অংক ছাড়িয়ে যায়। এসব অনিয়মেরও সদুত্তর পাওয়া জরুরি।
এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিয়ে
শতাংশের হিসাবে অভিবাসী নারীদের প্রতি সংঘটিত নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন
ঘটনা হিসেবে দেখলে হবে না। অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বাংলাদেশের একটি নারীও
বিদেশে অভিবাসী নারী হিসেবে নির্যাতনের শিকার হন, তার সুষ্ঠু প্রতিকার পেতে সহযোগিতা
করা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব।
আমরা জানি, সৌদি
আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া নারীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার
হওয়ায় ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলংকার মতো দেশ সৌদিতে নারী কর্মী পাঠানো প্রায় বন্ধ
করে দিয়েছে। সেখানে নারী গৃহশ্রমিকের সুরক্ষার কোনো কার্যকর নিশ্চয়তা ছাড়া শুধু
নারী গৃহকর্মী প্রেরণের শর্তে পুরুষ শ্রমিক প্রেরণের সুযোগের প্রস্তাবে রাজি হওয়া
সরকারের তরফে কতটা সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ,
সে প্রশ্ন তো রয়েই যায়!
মোদ্দাকথা হলো, শুধু
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জাতীয় প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে নাজমা বেগম, সুমিদের
মৃত্যু ও হাহাকার বাড়তেই থাকবে। মনে রাখতে হবে, অভিবাসন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে
স্বীকৃত একটি মানবাধিকার। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার সুরক্ষা, যেকোনো
ধরনের বৈষম্য, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ ও শাস্তি,
দাসত্ব,
জবরদস্তিমূলক শ্রম থেকে সুরক্ষা এবং সর্বোপরি
জীবনের নিরাপত্তায় আইনি সুরক্ষা লাভের অধিকার জাতিসংঘ গৃহীত অভিবাসী কর্মী ও তাদের
পরিবারের সুরক্ষাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে নিশ্চয়তা প্রদান করা
হয়েছে। বাংলাদেশও এ চুক্তির একটি পক্ষ রাষ্ট্র এবং এ চুক্তির অনুকরণে বাংলাদেশ
২০১৩ সালে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন নামে একটি আইনও প্রণয়ন করে। এ আইনে
অভিবাসী কর্মীদের অধিকার ও বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের অধীনে গঠিত শ্রম উইংসহ
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ
আইন অনুযায়ী অভিবাসনের জন্য নির্বাচিত কর্মী এবং নিয়োগকারীর মধ্যে বেতন, আবাসন
সুবিধাদি, মৃত্যু বা জখমজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ, কাজের মেয়াদ ইত্যাদি শর্তের উল্লেখ
করে কর্মসংস্থান চুক্তি সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে শ্রম উইংয়ের দায়িত্ব
হিসেবে অভিবাসী কর্মীদের কর্মস্থল পরিদর্শন এবং নিয়োগকারীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিধান
উল্লেখ করা হয়েছে। এ আইনে অভিবাসী কর্মীদের অধিকার হিসেবে তথ্য পাওয়ার অধিকার, আইনগত
সহায়তা পাওয়ার অধিকার এবং আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারের ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এ আইনে
সুনির্দিষ্টভাবে গৃহকর্মীদের সুরক্ষা কবচ হিসেবে কোনো ব্যবস্থার কথা বলা হয়নি।
অন্যদিকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের
বেশির ভাগ দেশ জাতিসংঘ গৃহীত অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষাসংক্রান্ত
আন্তর্জাতিক চুক্তিটিতে অনুসমর্থন করেনি বলে এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ কোনো
সুরক্ষা দাবি করতে পারে না। উল্লেখ্য,
গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাসংক্রান্ত আইএলও
কনভেনশন, যা সি১৮৯ হিসেবে অভিহিত,
বাংলাদেশ বা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশই
এ চুক্তি গ্রহণ করেনি।
শেষ কথা হলো, প্রেরণকারী
রাষ্ট্র হিসেবে নারী-পুরুষ সব অভিবাসী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রাথমিক
দায়িত্ব বাংলাদেশের। এজন্য একদিকে দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সিসহ অভিবাসন প্রক্রিয়ার
সঙ্গে জড়িত দেশীয় সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে
হবে। পাশাপাশি গ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও দরকষাকষির ক্ষেত্রে
শ্রমিকদের, বিশেষ করে নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ
মাত্রায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষাসংক্রান্ত
আন্তর্জাতিক চুক্তির পক্ষ রাষ্ট্র না হলেও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাষ্ট্রই
নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপসংক্রান্ত জাতিসংঘ চুক্তি সিডও এবং
নির্যাতনবিরোধী চুক্তি ক্যাটের পক্ষ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের দিক থেকে যেকোনো আলোচনা-দরকষাকষি ও
দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা সমঝোতা করার ক্ষেত্রে এ চুক্তিগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
দ্বিপক্ষীয় যেকোনো চুক্তি বা সমঝোতার ক্ষেত্রে নারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও
সুরক্ষার বিষয়ে নিয়োগকারী ব্যক্তির দায়িত্ব,
দায়িত্ব লঙ্ঘনে প্রতিকারের ব্যবস্থা, বিদেশী
দূতাবাস ও গ্রহণকারী রাষ্ট্রের প্রতিনিধির সমন্বয়ে যৌথ দল কর্তৃক নারীর কর্মস্থল
নিয়মিত পরিদর্শন ইত্যাদি বিষয়ে সুষ্পষ্ট শর্তের উল্লেখ থাকতে হবে।
পাশাপাশি বিদেশ গমনেচ্ছু নারী
কর্মীদের জন্য গন্তব্য দেশের আচার-প্রথা, ভাষা, কাজের ধরন, কর্মপরিবেশ, কাজের শর্তাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহের বিষয়টি
নিশ্চিত করতে হবে। আর শুধু গৃহকর্মী নয়,
দক্ষ শ্রমিক হিসেবে নারীকে গড়ে তোলার দিকে
দৃষ্টি দিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে জর্ডান ও লেবাননে পোশাক কারখানায় দক্ষ শ্রমিক
হিসেবে কর্মরত নারীদের কথা উল্লেখ করা যায়,
যেখানে ঝুঁকির পরিমাণও কম এবং যা প্রেরণকারী
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের দিক থেকেও দরকষাকষির জায়গাকে শক্তিশালী করবে।
আশার কথা হলো, সরকার
মনে হচ্ছে একটু নড়েচড়ে বসেছে এবার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর
পক্ষ থেকে এরই মধ্যে জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন ফোরামে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের সমস্যার
বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স নীতিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা
জানানো হয়েছে। আমরা এসব উদ্যোগের সঠিক বাস্তবায়ন চাই। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে নারী
গৃহকর্মী নিয়োগ বন্ধের হুমকির কাছে নতজানু না হয়ে বরং নারীদের দক্ষতা ও
অভিযোজনক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ও সঠিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সৌদি নিয়োগকর্তা
ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে নারী শ্রমিকদের ওপর সংঘটিত ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন
সহিংসতা এবং শারীরিক ও মানসিক সহিংসতা বন্ধের নিশ্চয়তার দাবিও তুলতে হবে বাংলাদেশ
সরকারের পক্ষ থেকে।
[সৌজন্যে: আইন ও সালিশ কেন্দ্র
(আসক)]
কামরুন্নেসা নাজলী: মানবাধিকার
কর্মী