স্বতন্ত্র চরিত্র নিয়ে পুরান ঢাকার মহল্লা

ইফতেখার আহমেদ

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পাড়া স্থানীয়ভাবে মহল্লা নামে পরিচিত। মহল্লা হলো পুরান ঢাকার মৌলিক দেশীয় শহুরে ইউনিট, যার স্বতন্ত্র পরিচয় চরিত্র বিদ্যমান। এই মহল্লার ধারণা গড়ে উঠেছে কয়েক শতকের কাল পরিক্রমায়। সাধারণভাবে মহল্লা দুই স্তরে বিভাজিত। রাস্তার সম্মুখভাগ (স্ট্রিট ফ্রন্ট) প্রায় ক্ষেত্রে বাজার বা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে কর্মব্যস্ত থাকে। এটি প্রথম স্তর। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্তর আবাসিক মহল্লার ঠিক পেছনে। এটি প্রায়ই বাজারের সম্মুখভাগের পেছনে লুকোনো থাকে। যদিও প্রথম দৃষ্টিতে মহল্লাকে জীর্ণ, সংকীর্ণ গাদাগাদিপূর্ণ লোকালয় বলে মনে হয়, তবে অবশ্যই এটি বাসযোগ্য জায়গা; যেখানে স্থানীয় স্থাপত্যের কিছু চমত্কার উদাহরণ আছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারুশিল্পের পণ্যের বাণিজ্যবেষ্টনী বা কেন্দ্র (এনক্লেইভ) হিসেবে গড়ে উঠেছে মহল্লাগুলো। এসব মহল্লা বড় ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয়েছে, যদিও কম-বেশি ভৌত আকার প্রায় ক্ষেত্রে অক্ষত বা একই অবস্থায় রয়ে গেছে। মহল্লার গঠন ধারাবাহিকতা প্রায়ই নির্ভর করেছে বিশেষ বা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোর ওপর, যারা শহুরে সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তন মোকাবেলা এবং নিজস্ব ব্যবসায়িক সুবিধায় একত্রে থাকার বাসনা পোষণ করেছে। এভাবে প্রতিটি মহল্লা একটি নিজস্ব স্বতন্ত্র চরিত্র নিয়েছে, যা তাদের ভৌত রূপে প্রতিফলিত হয়েছে। অন্যদিকে মহল্লাগুলোর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যাকে পুরান ঢাকা নগরবাদ বলা যেতে পারে। বিশেষ স্বতন্ত্র পরিসর বা বেষ্টনী হিসেবে সূচিত হয়ে অধিকাংশ মহল্লা ব্যাপকতর পুনর্নির্মাণের ভেতর দিয়ে গেছে। এটি বিশ শতকের প্রথমাংশ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পুরান ঢাকার অধিকাংশ বাড়ি ছিল অস্থায়ী প্রকৃতির, কাদা খড় কিংবা ছনের ছাউনি দিয়ে তৈরি। অবশ্য যারা সামর্থ্যবান বা ধনী তাদের বাড়ি ইট কংক্রিটের তৈরি। এসব বাড়ির অনেকটিতে কয়েক বছর ধরে আসল বা মূল জনগোষ্ঠী বাস করে এসেছে, অন্যদিকে অন্য কিছু বাড়ি নতুন জনগোষ্ঠী দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

পুরান ঢাকার মহল্লাগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্থানের বিশেষ শিল্পকর্ম, বাণিজ্য কুটির শিল্পের পরিসর বা বেষ্টনী হিসেবে উন্নয়ন হয়েছে। সেগুলোকে নিজস্ব নাম দিয়ে চিহ্নিত করা যেতে পারে, যা জনগোষ্ঠীর পেশা নির্দেশ করে। তাদের কিছু কিছু বসবাসকারী জনগোষ্ঠী হিসেবে বর্তমানকাল পর্যন্ত বাস করছে। মহল্লার বিশেষায়ণ প্রকাশকারী কিছু নাম হলো শাঁখারীবাজার (বিশেষ শাঁখের বাজার), কুমারতলী (কুমোরদের পাড়া/মহল্লা), তাঁতীবাজার (তাঁতীদের বাজার), বানিয়ানগর (বণিকদের জায়গা), চুড়িহাট্টা (চুড়ির বাজার) প্রভৃতি।

নাম থেকেই বোঝা যায়, মহল্লাগুলো খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত সম্প্রদায়ের বিশেষায়িত কারিগর, কারুশিল্পী ব্যবসায়ীদের আবাসস্থল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন