বাংলাদেশে পুষ্টিসংবেদনশীল কৃষির উন্নয়ন প্রসঙ্গে

মোস্তফা কে. মুজেরী

কয়েক দশকে বাংলাদেশ বিস্ময়জাগানিয়া উন্নয়ন সাধনে সমর্থ হয়েছে। দেশে দারিদ্র্যে জর্জরিত মানুষের সংখ্যা তাত্পর্যজনকভাবে কমেছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গসমতা আনয়ন, টিকাদান বৃদ্ধি, সংক্রামক ব্যাধি সংঘটনের ঘটনা রোধ এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার হ্রাসে চমত্কার অগ্রগতি হয়েছে। এ সাফল্যের পেছনে অংশত অবদান সর্বজনীন শিক্ষা উন্নয়নে নেয়া শক্তিশালী নীতি ও কর্মসূচি এবং মানসম্মত মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার অভিগম্যতা নিশ্চিতের বিষয়টিতে দেয়া যেতে পারে। 

অবশ্য এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সেগুলোর অন্যতম হলো উচ্চমাত্রার খাদ্য অনিরাপত্তা (প্রায় চার কোটি মানুষ খাদ্যের দিক থেকে এখনো অনিরাপদ), লিঙ্গবৈষম্য (যেমন স্বাস্থ্যসেবায় কম প্রবেশগম্যতা, খাদ্যসহ গৃহস্থ সম্পদের ওপর নারীর কম নিয়ন্ত্রণ থাকা এবং কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ ও কম মজুরি) এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়) অধিকন্তু যদিও ২৫ বছরের অধিক সময়ে জন্মহার নাটকীয়ভাবে কমেছে, দারিদ্র্য ও অপুষ্টির আন্তঃপ্রাজন্মিক চক্রের কারণে যুব প্রজননহার অনেকটাই স্থবির রয়ে গেছে। ২০১৭ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫৭টি দেশের মধ্যে ১২০তম। 

শিশুর বেঁচে থাকা ও দীর্ঘমেয়াদি ভালো থাকার জন্য শৈশব ও মাতৃ গর্ভাবস্থায় অপুষ্টির অনেক বিরূপ ফলাফল রয়েছে। মানবপুঁজি, অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা ও বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের জন্যও এর তাত্পর্যজনক সুদূরপ্রসারী পরিণাম আছে, বিশেষ করে এসডিজি ও অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে। অপুষ্টির পরিণামও বাংলাদেশে নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়, যেহেতু পাঁচ বছরের নিচের প্রায় ৫৫ লাখ শিশু (৩৬ শতাংশ) দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টিতে (খর্বকায়ত্ব বা বয়স অনুপাতে কম ওজন) ভুগছে এবং ১৪ শতাংশ শিশু ব্যাপকভাবে পুষ্টিহীনতার শিকার (কৃশকায়ত্ব বা উচ্চতা অনুপাতে কম ওজন)

অপুষ্টি দূরীকরণে সাম্প্রতিক একটি ধারণা হলো পুষ্টিসংবেদনশীল কৃষি, যা কৃষির খাদ্যভিত্তিক ধারণার বিস্তার ঘটায়। আলোচ্য ধারণায় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য, খাবারের বৈচিত্র্য, অপুষ্টি ও ক্ষুদ্র পুষ্টকণা ঘাটতি মোকাবেলায় খাদ্য সমৃদ্ধকরণের ওপর জোর দেয়া হয়। অধিকন্তু বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য থেকে বিবিধ সুফল, ভালো পুষ্টির জন্য খাদ্যের পুষ্টিগত মূল্য চিহ্নিতকরণ, খাদ্য এবং গ্রামীণ জীবিকা সমর্থনে কৃষির সামাজিক তাত্পর্যে গুরুত্বারোপ করা হয় এ ধারণায়। 

পুষ্টিসংবেদনশীল কৃষির সার্বিক লক্ষ্য হলো অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফসল উৎপাদন নিশ্চিতে খাদ্য ব্যবস্থা ভালোভাবে সমৃদ্ধ করা। এ ধারণায় এভাবে পুষ্টির ক্ষেত্রে কৃষির অবদান সর্বোচ্চকরণের পথ সন্ধান করে। পুষ্টিসংবেদনশীল কৃষি দরিদ্র পরিবারগুলোকে টার্গেট করে, লিঙ্গসমতার উন্নয়ন ঘটায় এবং পুষ্টি শিক্ষা প্রদান করে, যাতে পরিবার বিশেষ করে নারী ও তরুণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টিগত উন্নয়ন সম্ভব হয়। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো অপুষ্টির অন্যান্য কারণ দূরীকরণে নিয়োজিত অন্যান্য খাতের সঙ্গে কৃষির সংযোগ ঘটায়।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন