ব্রিটেনের শ্রম উৎপাদনশীলতায় ব্রেক্সিটের ধাক্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্রিটিশ শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে কমেছে। ব্রেক্সিটের দোলাচলে দেশটির অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় এমনটি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) প্রতিবেদনে। খবর গার্ডিয়ান।

জুন পর্যন্ত তিন মাসে ব্রিটিশ শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওএনএসের প্রতিবেদনে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝির পর থেকে এটি দেশটির সবচেয়ে দুর্বল উৎপাদনশীলতার রেকর্ড। প্রসঙ্গত, লেবার প্রডাক্টিভিটি বা শ্রম উৎপাদনশীলতা বলতে ঘণ্টাপ্রতি কোনো অর্থনীতির উৎপাদনের পরিমাপ বোঝায়।

দেশটির উৎপাদনশীলতার চলমান দুর্বল রেকর্ড ২০১২ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকে অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ওএনএস। তবে ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর উৎপাদনশীলতা কমার বিষয়টি তীব্রতর হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। আগের টানা দুই প্রান্তিকের শূন্য প্রবৃদ্ধি পর এবার পতনের দেখা পেল ব্রিটিশ অর্থনীতি।

এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে শ্রমিকপ্রতি উৎপাদন প্রবৃদ্ধির দেখা পায়নি বলে জানিয়েছে এএনএস। তবে একই সময় সেখানে রেকর্ড কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু এ প্রান্তিকেই ব্রিটিশ অর্থনীতি ২০১২ সালের পর থেকে প্রথমবারের মতো সংকুচিত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উৎপাদনশীলতা না বাড়লে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জীবনের মান উন্নত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত কনজারভেটিভ পার্টির কনফারেন্সে নিজের বক্তৃতায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন উৎপাদনশীলতাকে। তিনি বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও প্রযুক্তির দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি। এটা অর্জনের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মের আমলেও উৎপাদনশীলতাকে যাবতীয় এজেন্ডার কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোই ছিল মে সরকারের শিল্প পরিকল্পনার মুখ্য বিবেচনা। তবে মে সরকার আশানুরূপ উৎপাদনশীলতার দেখা পায়নি বলে সবসময় অভিযোগ করে এসেছে বিভিন্ন লবি গ্রুপ ও লেবার পার্টি।

অন্যদিকে ছায়া চ্যান্সেলর জন ম্যাকডোনেল বলেন, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী কনজারভেটিভ পার্টি ব্রিটেনের অর্থনীতিকে বলতে গেলে মাটিতে নামিয়ে এনেছে। এটাকে শুধু ব্রেক্সিটকেন্দ্রিক কোনো ব্যর্থতা বলা যায় না। বরং সরকারের এ ব্যর্থতা আমাদের অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।

এছাড়া নিম্ন উৎপাদনশীলতা ও বিনিয়োগের কারণে আর্থিক সংকটের পর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। দেশটির অর্থনীতির এ শ্লথতা ব্রেক্সিট নিয়ে রেফারেন্ডাম হওয়ার পর থেকে বেড়েছে বলেও জানিয়েছে একই প্রতিবেদন। ওই রেফারেন্ডামে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় আসায়, অন্যদিকে দেশটির বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকায় উৎপাদনশীলতা কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষত দেশটির অর্থনীতি নিয়ে নিশ্চিত কোনো কিছু বুঝে উঠতে না পারায় প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ কমেছে সবচেয়ে বেশি। অথচ উৎপাদনশীলতা চাঙ্গা করার জন্য এ খাতে বিনিয়োগ খুব জরুরি।

ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টরেস প্রধান অর্থনীতিবিদ তেজ প্যারিখ বলেন, ব্যবসায় পরিবেশে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তা আমাদের দেশকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সবক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বিশেষত নতুন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের যে খরা দেখা দিয়েছে, তা আমাদের অর্থনীতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। এসব খাতে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের অর্থনীতির কণ্ঠরোধের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। আগামীতে আমাদের অর্থনীতি আরো বেশি চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় অনেক কোম্পানি নিজেদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা কমিয়ে এনেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন