ওকজা এখন নতুন বাস্তবতার নাম?

ফিচার ডেস্ক

পুং জুন হু তার ওকজা ছবিতে এক দক্ষিণ কোরীয় কিশোরীর কাহিনী বলেছেন, যার বন্ধু এক সুপার পিগএক বিশাল আকৃতির শূকর। ছবিতে এই কিশোরী প্রাণপণ চেষ্টায় বিশালদেহী শূকরকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ঘটনার একপর্যায়ে দেখা যায় মিরান্ডো করপোরেশন মাংসের জোগান বাড়ানোর জন্য সুপার পিগের উৎপাদন শুরু করেছে। কসাইখানায় জড়ো করা হচ্ছে শত শত সুপার পিগ। এমনিতে ওকজা একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। ২০১৭ সালে ছবিটি মুক্তি পায়, কিন্তু ছবি এখন আবার আলোচনায় কারণ, যা ছিল বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী তা এখন ভীতিকর এক বাস্তবতা হয়ে হাজির হয়েছে। মাত্র দুই বছর পর কল্পকাহিনীই রূঢ় বাস্তব হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

ব্লুমবার্গ নিউজ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানাচ্ছে, চীনের দক্ষিণ অংশে কৃষকদের খামারে দৈত্যাকার শূকর প্রজনন শুরু হয়েছে, এখানকার একেকটি শূকরের আকৃতি মেরু অঞ্চলীয় একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভালুকের সমান। সম্প্রতি একটি দৈত্যাকার শূকরের ওজন মাপা হয়েছে ,১০২ পাউন্ড। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে: কসাইখানায় একেকটি শূকর বিক্রি হচ্ছে ১৩৯৯ ডলারে, চীনা মুদ্রায় ১০ হাজার ইউয়ান। ফলে নানিং অঞ্চলের খামারিদের গড় আয় প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে।

ওই অঞ্চলের যাউ হাইলিন নামের এক শূকর খামারি ব্লুমবার্গের কাছে বলেছেন, এখানকার খামারিদের দৈত্যাকারের শূকর উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওজনদার শূকরে লাভ শতকরা শতাংশ বেশি। দৈত্যাকার শূকরের ব্যাপক চাহিদার পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে, আফ্রিকান সোয়াইন ফিভারে পুরো দেশের শূকর প্রজনন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা। এক হিসাবে দেখা গেছে, সোয়াইন ফিভারে চীনের দেশীয় শূকর উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ফলে সোয়াইন ফিভারের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই চীনা সরকার খামারিদের কাছে আবেদন জানিয়েছে, শূকর উৎপাদন যতটা সম্ভব বাড়ানোর জন্য, এতে শূকরের মাংসের চাহিদা মোকাবেলা করা সহজ হবে। চীনের মেরু অঞ্চলীয় ভালুকসদৃশ এই শূকরকেই পুন জুন হো তার সিনেমায় নাম দিয়েছেন ওকজা বলে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে চীনা উপপ্রধান হু চুনহোয়ার বরাতে বলা হয়েছে, তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন ২০২০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত শূকরের মাংসের সরবরাহে মারাত্মক অপ্রতুলতা বজায় থাকবে। বছর চীনে শূকরের মাংসের ঘাটতি রয়েছে ১০ মিলিয়ন টন, যা বিশ্ববাজারের প্রাপ্য মাংসের জোগানের চেয়েও বেশি। যে কারণে চীনের সামনে বিশ্ববাজার থেকে মাংস সংগ্রহের কোনো পথ খোলা নেই। ফলে চীনকে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর দিকেই নজর দিতে হয়েছে।

পুংয়ের বেশির ভাগ কাজের মতোই ওকজাও মানুষের সঙ্গে পুঁজিবাদের দৈনন্দিন সম্পর্ক দ্বারা উৎসাহিত। আমাদের সব সমস্যার মূলে রয়েছে পুঁজিবাদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ২০১৭ সালে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান-এর কাছে বলেছিলেন কথা। এটা আনন্দ এনেছে কিন্তু বিপরীতে দুঃখ-বেদনা এনেছে অনেক বেশি! আমার চলচ্চিত্রে যে প্রশ্নটা করেছি আমরা কেন আবহাওয়া কিংবা প্রাণিজগতের এত ক্ষতি করছি, এটার কারণও শেষমেশ দেখবেন ওই পুঁজিবাদ।

ছবি বানানোর সময় পুন নিশ্চিতভাবেই কল্পনা করেননি যে ওকজা চরিত্রের বাস্তবে দেখা মিলবে চীনে, দুই বছরের মধ্যেই।

ওকজা পরিচালক পুন জুন হোর সর্বশেষ ছবি প্যারাসাইট বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাল্মে পুরস্কার জয় করেছে। নিওন প্রযোজিত ছবিটি আসছে ১১ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন