নোয়াখালীতে তীব্র হচ্ছে মেঘনার ভাঙন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নোয়াখালী

নোয়াখালীর তিন উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। এতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। বাস্তুভিটা হারিয়ে দিশেহারা হাজার হাজার মানুষ। নতুন নতুন এলাকা ভাঙতে থাকায় বসতি সরিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, ভাঙন রোধে মেগা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

জানা গেছে, পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করা হয় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াকে। কৃষি ও মত্স্য সম্পদেও এ উপজেলা বেশ সমৃদ্ধ। তবে মেঘনা নদীর ভাঙনের কবলে সর্বস্ব হারাচ্ছে এ উপজেলার বাসিন্দারা। নদীর তীব্র স্রোত আর জোয়ারের পানিতে প্রতি বছরই বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, হাট-বাজার, সড়ক, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির, বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কোথাও কোথাও বালির ব্যাগ ফেলেও ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।

উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের প্রশাসক মুশফিকুর রহমান জানান, যুগ যুগ ধরে হাতিয়া ভাঙছে। কোনো কোনো এলাকার মানুষ একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙনের শিকার এসব মানুষ বেড়িবাঁধসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করছে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষগুলো দিন দিন আরো দরিদ্র হচ্ছে।

বয়ারচরের বাসিন্দা আবদুর রহিম জানান, ভাঙনের কারণে এ পর্যন্ত আটবার তাকে বসতি সরাতে হয়েছে। তার বর্তমান বসতি নদী থেকে এক কিলোমিটার দূরে। তবে পাড় ভাঙছে, তাতে আগামী ছয়-আট মাসের মধ্যে এই এলাকাও বিলীন হয়ে যেতে পারে। ফলে ভাঙনের আতঙ্ক নিয়েই পরিবার-পরিজনসহ বসবাস করছেন তিনি।

শুধু হাতিয়া নয়, ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ভূমি। নদীগর্ভে বসতভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। দ্রুত স্থায়ী নদী রক্ষা বাঁধ ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হলে বসতভিটা ও সম্পদ রক্ষা করা যাবে বলে মনে করছেন তারা।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের বকুল বেগম জানান, আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত ১১ বার ভাঙনের কারণে বসতি পাল্টিয়েছেন। বর্তমান বসতিও ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। আমরা চাই দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।

পাউবো সূত্র জানায়, জেলার প্রায় ৮৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডের নলচিরা, সুখচর, নিঝুম দ্বীপ, চর ঈশ্বর (উত্তরাংশ), বয়ারচর, কেয়ারিংচর, নলেরচর, নঙ্গলিয়া, সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক, মোহাম্মদপুর, চর বাগ্গা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, চরএলাহী, চর লেংটা, গাংচিল, চরবালুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন তীব্র। গত ১০ বছরে এসব এলাকার ১১ হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটি হারিয়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এছাড়া বসতিসহ নানা স্থাপনাও বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে।

সূত্র আরো জানায়, চলতি বছর সুবর্ণচর উপজেলার চর বাগ্গা এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে এ এলাকার ২০টিরও বেশি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছে।

ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে নোয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাছির উদ্দিন বণিক বার্তাকে জানান, ভাঙন রোধে বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে একটি মেগা প্রকল্প ১১ জুলাই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় এ প্রকল্প গ্রহণ করে একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে।

তিনি জানান, প্রকল্পের অধীনে বৃহত্তর নোয়াখালীর (লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও নোয়াখালী জেলা) উপকূলীয় এলাকার ১২৬ কিলোমিটার জুড়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে হাতিয়ার ৮৬ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ হবে। নদী শাসনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ এলাকার চেহারাই পাল্টে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন