থমকে গেল সিলেট বিসিক সম্প্রসারণের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট

১৪ বছর আগে সিলেটের খাদিমনগরে গড়ে ওঠে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। উদ্যোক্তাদের আগ্রহের কারণে বিসিকের সবগুলো প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। প্লটের অভাবে থমকে থাকে নতুন শিল্প-কারখানা গড়ার উদ্যোগ। পরে প্লটের চাহিদা পূরণের জন্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয় সিলেট বিসিকের। এরপর নানা মন্ত্রণালয়ে ঘুরতে থাকে এ প্রকল্পের ফাইল। দেখা মেলেনি সম্প্রসারণ উদ্যোগের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি। এ রকম পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বিসিক সম্প্রসারণের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

বিসিক সিলেটের উপমহাব্যবস্থাপক সৈয়দ বখতিয়ার উদ্দিন আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিসিক সম্প্রসারণ করা হবে বলে মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। সিলেটে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, সেখানে বিসিকের জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দের কথাও বলা হয়। ২০০৫ সালে সিলেটের খাদিমনগর বিসিক সম্প্রসারণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রথমে ২৫ একর সম্প্রসারণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে তা ১০ একরে নামিয়ে আনা হয়। তবে এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি এ প্রকল্প।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খাদিমনগরের বিসিকে ২০০৬ সাল থেকে কোনো প্লট খালি নেই। সম্প্রসারিত না হওয়ায় সিলেটের অনেক বিনিয়োগকারীই এখন উপযুক্ত জমির অভাবে বিনিয়োগ করতে পারছেন না।

সৈয়দ বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো ছাড়াও আমরা একাধিকবার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিসিক সম্প্রসারণের আবেদন জানাই। সে সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত বিসিক সম্প্র্রসারণ না করে রুগ্ণ শিল্পের দখলে থাকা জমি উদ্ধার করে নতুন উদ্যোক্তাদের লিজ প্রদানের কথা বলেছেন।

যদিও দখলে থাকা জমি উদ্ধার সিদ্ধান্তেরও কোনো অগ্রগতি হয়নি। সিলেটের দুই বিসিকে রুগ্ণ শিল্প-কারখানার দখলে আছে অন্তত ১০টি প্লট। দীর্ঘদিন এসব কারখানা বন্ধ থাকলেও এর মালিকরা প্লটের দখল ছাড়ছেন না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে সৈয়দ বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে রুগ্ণ শিল্পগুলোর কাছ থেকে প্লট উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। মামলা করেও তেমন সুফল পাওয়া যায়নি। বরং আরো দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে হয়েছে। এখন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্লটগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

সিলেটের দুটি বিসিক শিল্পনগরীর কোনোটিতেই খালি জায়গা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন নতুন শিল্পোদ্যোক্তরা। এছাড়া দুটি বিসিকে জায়গা না থাকায় এখানকার শিল্প মালিকরাও নিজেদের কারখানা সম্প্রসারণ করতে পারছেন না।

বিসিক সূত্রে জানা যায়, সিলেটের গোটাটিকর ও খাদিমে দুটি বিসিক শিল্পনগরী রয়েছে। গোটাটিকর শিল্পনগরীতে কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। খাদিমে শিল্পনগরী গড়ে ওঠে ১৯৮৯ সালে। এ দুটি শিল্পনগরীর মোট ২৬৫টি প্লটের মধ্যে শিল্প ইউনিট স্থাপিত হয়েছে ১৫০টি। খাদিমনগর এলাকায় বিসিকের মোট প্লট রয়েছে ১১৬টি। এতে স্থাপিত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ৭৬টি। গোটাটিকরে ১৪৬টি প্লটের মধ্যে শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ৭৮টি।

বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তারা, বিসিকের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে ২০০৫ সালে এর আয়তন বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, তত্কালীন সময়ে সরকারও দেশের ১৭টি শিল্পাঞ্চলের আয়তন বাড়াতে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে। এজন্য ১৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণসাপেক্ষে শিল্পনগরী সম্প্র্রসারণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

সে অনুযায়ী খাদিমনগর বিসিকের কর্মকর্তারা প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠান। তবে ১৪ বছর পর সম্প্রতি এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সরকার।

নতুন বিনিয়োগ আনতে ও প্রবাসীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সিলেট বিসিক সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে খাদিমনগর বিসিক শিল্পনগরীর শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুমায়ুন কবির সিদ্দিকী বলেন, সিলেটে শিল্পের প্রসার ঘটছে। নতুন শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য এখানে জমিই প্রধান সমস্যা। সরকার যদি জমি দিতে পারে, তাহলে অনেকেই শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসবেন। প্রবাসীরাও এখানে বিনিয়োগ করতে চান।

তিনি বলেন, বিসিকে কিছু সমস্যাও রয়েছে। এগুলো দূর করা গেলে বিনিয়োগকারীরা আরো উৎসাহী হবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন