বগুড়ায় ভেসে গেছে অর্ধশত কোটি টাকার মাছ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বগুড়া

বগুড়ায় গত জুলাইয়ের মাঝামঝি সময়ে শুরু হওয়া বন্যায় পাঁচ হাজারের বেশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। একই সঙ্গে ভেসে গেছে বেশ কয়েকটি বিলে চাষকৃত মাছও। ভেসে যাওয়া এ মাছের মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ৪ হাজার ৩৮১ মাছচাষী।

বগুড়া জেলা মত্স্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় পুকুর রয়েছে ৫৯ হাজার ২৬৮টি। এছাড়া বিল রয়েছে ৯৯টি। এসব বিল ও পুকুরে মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত চাষীর সংখ্যা ২৬ হাজার ২০৭। সম্প্রতি যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, গাবতলী, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। ফলে এসব উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হয় এমন ৫ হাজার ১২১টি পুকুর ও বিলের বিপুল পরিমাণ মাছ ভেসে যায়।

বগুড়া জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী মণ্ডলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় প্রায় দেড় হাজার টনেরও বেশি মাছ ভেসে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরে মাছ নেই বললেই চলে। এসব পুকুর নতুনভাবে প্রস্তুতের পর মাছ চাষ করা সম্ভব হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা বলছেন, সরকারিভাবে অনুদান বা সহযোগিতা না পেলে নতুন করে মাছ চাষ করা যাবে না। কোনো কোনো উপজেলায় মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি ভেঙে গেছে পুকুরের পাড়। ভেসে গেছে মাছের জন্য রাখা খাবারও। পানিতে তলিয়ে থাকায় পুকুরের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। অবকাঠামো মেরামত করে মাছ চাষে ফিরতে যে পুঁজির প্রয়োজন তা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

গাবতলীর মাছুনদী বিল পাড়ের মাছচাষীরা জানান, বিলে পানি বাড়লে আটকানো যায় না। তাছাড়া এ বিলের পাড়ও তেমন নেই। তাই বন্যার পানিতে বিলের সব মাছ ভেসে গেছে। এখন বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি আরো কমলে বিলে মাছ ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কাতলাহার বিলের ওয়াজেদ হোসেন জানান, প্রথমে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় বন্যা দেখা দেয়। কিন্তু রাতারাতি পানি বেড়ে বাঙ্গালী নদীর উভয় তীর প্লাবিত হয়। প্লাবিত হয়ে ভেসে যায় বিলের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

গাবতলী উপজেলার মত্স্য কর্মকর্তা আয়েশা খাতুন বলেন, এ উপজেলায় পুকুর রয়েছে চার হাজার। এর মধ্যে ১৫০টির মতো পুকুরের ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি বিলের মধ্যে ভেসে গেছে কাতলাহার বিলের মাছ। এ বিলের প্রায় ১৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। বিলটি এখনো বন্যার পানিতে ডুবে আছে। এছাড়া উপজেলার আনিছুর রহমানের বিসমিল্লাহ হ্যাচারির প্রায় কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।

সোনাতলা উপজেলার মত্স্য কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বলেন, এ উপজেলার ৩ হাজার ৩০০টি পুকুরের মধ্যে ৩ হাজার পুকুর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার সিংহভাগ পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হয়। সবগুলো পুকুরই বাঙ্গালী নদীর পানিতে ডুবে গেছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার চাষী ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মূলত দুই মাস আগে বেশির ভাগ পুকুরে মাছের পোনা ছাড়া হয়েছিল। কোনো কোনো পুকুরে বড় মাছও ছিল। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে নতুন করে চাষ শুরু করতে পারবে। এ জন্য বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বগুড়া জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. তোফাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, বগুড়ায় মোট বিল রয়েছে ৯৯টি। পুকুর ৫৯ হাজার ২৬৮টি। এর মধ্যে এবার বন্যায় ৫ হাজার ১২১টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহযোগিতা প্রদানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন