ঔপনিবেশিক নওগাঁর প্রাসাদ ও রাজবাড়ি

ফারুক এহসানউল্লাহ

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ জমিদারি এস্টেটের নাম পাওয়া যায়। এই জমিদারি এস্টেটের জমিদারদের বাসভবন হিসেবে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য ইমরাত গড়ে উঠতে দেখা গেছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মধ্যে নওগাঁ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইমারতের দেখা মেলে। এর মধ্যে রয়েছে দুবলাহাটি রাজপ্রাসাদ, মহাদেবপুর রাজপ্রাসাদ বলিহার রাজপ্রাসাদ। এর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় দুবলহাটি রাজপ্রাসাদের কথা। দুবলহাটি  এলাকাটি নওগাঁ শহর থেকে আনুমানিক সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। দুবলহাটি রাজবংশ বৃহত্তর রাজশাহী জেলার জমিদার বংশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। অনেক গবেষক মনে করেন পাল আমলের শেষাংশে (৭৫০-১১৫০) দুবলহাটি জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। জগত্রাম রায় নামক জনৈক লবণ ব্যবসায়ী ছিলেন এই জমিদারির পূর্ব প্রতিষ্ঠাতা।

সময়ের পরবর্তীকালে মোগল শাসনামলে বাদশাহি সনদমূলে এই জমিদারি স্বীকৃতি লাভ করে। দুবলহাটি জমিদারদের মধ্যে রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী ১৮৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে তার দানশীলতা জনকল্যাণের জন্য তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৮৭৫ সালে রাজাএবং ১৮৭৭ সালে রাজা বাহাদুরউপাধি লাভ করেন। দুবলহাটির জমিদাররা স্বীয় আবাসিকতা জমিদারি কার্য পরিচালনার জন্য দুবলহাটিতে নির্মাণ করেন এক সুদৃশ্য সুবিশাল রাজপ্রাসাদ।

দুবলাহাটির দ্বিতল রাজপ্রাসাদ ভবন .৪৫ একর ভূমির ওপর নির্মিত। প্রাসাদের চারদিকে রয়েছে চারটি বৃহৎ পুষ্করিণী। সামগ্রিকভাবে প্রাসাদের ভূমি নকশা চারটি অঙ্গনে বিভক্ত যথা . রংমহল, . কাছারি, . অন্দরমহল . রন্ধনশালা। অঙ্গনগুলোকে কেন্দ্র করেই প্রাসাদের নিচতলা দ্বিতলে শতাধিক কক্ষ নির্মিত হয়েছে। উত্তরমুখী এই প্রাসাদ ভবনের সম্মুখাংশের মধ্যস্থলে অর্ধবৃত্তাকৃতির খিলানবিশিষ্ট একটি সুউচ্চ প্রবেশ তোরণ এবং পূর্ব পশ্চিম মাথায় অর্ধবৃত্তাকার খিলানসারি বেষ্টিত দুটি অভিক্ষিপ্ত বা বর্ধিত বারান্দা বিদ্যমান। এছাড়া প্রবেশ তোরণের পশ্চিমে এবং পূর্বে দুটি বারান্দা রয়েছে। বারান্দা দুটির সম্মুখে চারটি করে মোট আটটি সুউচ্চ করিন্থীয় স্তম্ভ ইমারতের দ্বিতল অংশ পর্যন্ত উঠে গেছে। এদের পূর্ব পশ্চিম প্রান্তের স্তম্ভ যুগলভবে নির্মিত। প্রবেশ তোরণ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে প্রথমে নাটমহল অঙ্গন এর পূর্ব দিকে কাছারি অঙ্গন পরিলক্ষিত হয়। নাটমহল অঙ্গনের পশ্চিম দিকে রয়েছে সমতল ছাদবিশিষ্ট একটি অনন্য সুন্দর নাট্যমঞ্চ বা রঙ্গমঞ্চ। ইমারতটি মঞ্চসহ বিভিন্ন আকৃতির মোট পাঁচটি কক্ষে বিভক্ত। মূল মঞ্চের আয়তন .৩৮ মিটার গুণন .৬০ মিটার। অঙ্গনের উত্তর ব্লকের দ্বিতলে রয়েছে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত একটি বিশাল দরবার হল।

স্থাপনাটির হলঘরের উত্তর দক্ষিণে রয়েছে দুটি ঝুলবারান্দা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন