২৬ বছর বয়সে ১০ কোটি পাউন্ডের খাবারের কোম্পানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

আর্থিক খাতে যখন ২৬ বছর বয়সী টিমো বোল্ট কাজ করতেন, তখন সুপারমার্কেটে যাওয়ার সময় পেতেন না তিনি। ২০১২ সালের দিকে সেই সময়টায় লন্ডনে লম্বা সময় ধরে অফিসের কাজ করতে গিয়ে ওই তরুণ ভাবছিলেন, কীভাবে বাসায় সহজে রান্না করা যায় এবং ঘরে বসেই ভালো খাবার খাওয়া যায়।

বোল্টের সহজ স্বীকারোক্তি, যদিওবা রান্না করতে আমার কাছে পর্যাপ্ত সময় থাকত, দেখা যেত কিছু খাবার অপচয় হতো। এছাড়া অনলাইনে পাওয়া কিছু কিছু রেসিপির কোনো অর্থই হয় না। তখন ভাবলাম, কীভাবে আমি আমার সমস্যা সমাধান করতে পারি এবং রান্নাবান্না সহজতর করতে পারি?

বিষয়টিতে গবেষণা করে টিমো বুঝতে পারেন যে, তাদের মতো যাদের হাতে সময় অল্প, তারা এমন এক কোম্পানির প্রত্যাশায় ছিলেন, যারা পোস্টের মাধ্যমে নিয়মিত খাবার উপাদান পাঠাবে। সবকিছু পরিমাপমতো বাক্সভর্তি করে পাঠানো হলো, যাতে রেসিপি অনুসরণ করা সহজতর হয়।

আজ থেকে সাত বছর আগে ওই সময়টায় হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানিই এ সেবা চালু করেছিল। এমন একটি ছিল জার্মানির হেলোফ্রেশ। টিমো বুঝতে পেরেছিলেন যে, ওই বাজার বড় হতে যাচ্ছে। তাই আর্থিক খাতের চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে খাদ্য উপাদান সরবরাহের ব্যবসা চালু করেন তিনি, যার নাম দেন গাউস্টো।

এ সময় দাঁড়িয়ে দেখলে, কোম্পানিটির বার্ষিক বিক্রি ১০ কোটি পাউন্ড ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে কোম্পানিটি প্রায় সমমানের বিনিয়োগও নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিম্পলি কুক ও মাইন্ডফুল শেফের সঙ্গে মিলে গাউস্টো এখন এমন একটি শিল্পের অংশীদার, শুধু যুক্তরাজ্যেই যার বার্ষিক বাজার ১০০ কোটি পাউন্ডের। বৈশ্বিকভাবে ২০২৫ সাল নাগাদ এই মিল কিট খাতের আকার ৯০০ কোটি ডলারে (৭২০ কোটি পাউন্ড) দাঁড়াবে।

বর্তমানে গাউস্টোর জনবল ৫০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে, যাদের প্রত্যেকেই ব্রিটেনে কর্মরত। টিমোর লাউঞ্জে সাত বছর আগে যখন গাউস্টোর যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার তুলনায় বর্তমান চিত্র আসলে বেশ ঈর্ষণীয়।

বার্লিনে জন্মগ্রহণ করা ও বড় হওয়া টিমো বিশের কোঠাতে লন্ডনে আসেন। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে গাউস্টো চালু করতে নিজের জমানো ৭৫ হাজার পাউন্ড ব্যবহার করেন। তার সঙ্গে বন্ধু ও পরিবার-পরিজন থেকে সংগ্রহ করেন ১ লাখ ৩০ হাজার পাউন্ড।

শুরুর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে ৩৪ বছর বয়সী টিমো বলেন, আমি আমার লিভিং রুম থেকে শুরু করেছিলাম এবং আমার হাতে পর্যাপ্ত ফান্ডিং ছিল না। বড় বেতনের চাকরি ছেড়ে আমি এখন বেতনবিহীন কর্মী হয়ে গেলাম। আমি সারা দিনই বিভিন্ন রেসিপি পরীক্ষা করতাম এবং শিগগিরই আমার বক্স চেখে দেখতে আমার বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনকে উদ্বুদ্ধ করতে লাগলাম।

প্রথম তিন মাস নিজের জন্য বেতন বরাদ্দ করতে পারেননি টিমো, কিন্তু ওই সময়টায় বেশ আশাবাদী ছিলেন বলে জানান তিনি। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠাতাদের মতো শুরুর দিকে ব্যবসায়ের সব জিনিসই দেখাশোনা করতেন।

তিনি বলেন, শুরুতে আমি আমার গ্রাহকদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দিতাম, যা আমার স্ত্রী পছন্দ করত না। দেখা গেছে, অনেকে মধ্যরাতে ফোন দিত তাদের ডেলিভারি কোথায় আছে তা জানার জন্য। তবে ওই বিষয়টি আমাকে বেশ শিক্ষা দিয়েছে কোন জায়গায় আমার কতটুকু উন্নতি করতে হবে।

শুরুতে পূর্ব লন্ডনের একটি স্টল থেকে বক্স সরবরাহ শুরু করেন। তারপর অনলাইনে উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। বর্তমানে পশ্চিম লন্ডনের হ্যামারস্মিথে তার প্রধান কার্যালয় এবং লিংকনশায়ারে রয়েছে তাদের নিজস্ব কারখানা। ৪০ বছর বয়সী সন্তানের বাবা-মাই গাউস্টোর প্রধান গ্রাহক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে টিমো বলেন, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বাইরে ব্যবসা সম্প্রসারণের কোনো ইচ্ছা নেই তার। তবে ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। কারণ এতে অনেক মেধাবী যুক্তরাজ্যে কাজ করতে এবং অবস্থান করতে চাইবে না।

তিনি আরো বলেন, সামষ্টিক পর্যায়ে ব্রেক্সিটের অনেক ঝুঁকি দেখছি, তবে আমি খুব ইতিবাচক যে অনিশ্চয়তার সময়টাতেও ঘরে বসে রান্নার প্রয়োজনীয়তা বাড়বে।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন