জেমি ডে দায়িত্ব নেয়ার সময় ধ্বংসস্তূপের ওপর ছিল দেশের ফুটবল। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে যাওয়ার প্লে-অফে ভুটানের কাছে হার, আর ইতিহাসে ফিফা র্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ। অবশেষে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। স্বপ্নযাত্রার সারথি জেমি ডে লাল-সবুজকে টেনে নিতে চান বহুদূর।
২০১৮ সালের মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণ। সিনিয়র জাতীয় দলের আগে ৪০ বছর এ বয়সী কোচকে দাঁড়াতে হয়েছে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ডাগআউটে। বাকিটা তো ইতিহাস। থাইল্যান্ড ও কাতারকে টপকে এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় পর্বে যায় বাংলাদেশ। নকআউট পর্বে উত্তর কোরিয়ার কাছে ১-৩ গোলের হারে থামে স্বপ্নযাত্রা। অতীতের মতো ম্যাচের আগেই হেরে যায়নি বাংলাদেশ, বরং প্রতিপক্ষ দলকে লড়াইয়ের ঝাঁজ বুঝিয়েছে জেমির শিষ্যরা।
সিনিয়র দলের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ভুলে যেতে চাইবেন জেমি, ভুলতে চাইবেন ফুটবলাররাও। নীলফামারীতে শ্রীলংকার কাছে হার দিয়ে বাংলাদেশ সিনিয়র দলে এ কোচের অভিষেক। এখন পর্যন্ত খেলা ১৫ ম্যাচে ওই একবারই নড়বড়ে ছিল জেমি ব্রিগেড।
এরপর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নতির গ্রাফটা হয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। যার প্রমাণ সর্বশেষ দুই ম্যাচ। কাতারের সঙ্গে লড়াইয়ের দুরন্ত মানসিকতা ভারত ম্যাচ পর্যন্ত টেনে নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর্সেন ওয়েঙ্গারের সাবেক শিষ্য জেমি । যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কথা রেখেছেন সদা হাস্যোজ্জ্বল এ ইংলিশ।
সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ দল এখন আর ম্যাচের আগেই হেরে বসে না। ফুটবলারদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে, উন্নতি হয়েছে ফিটনেসে। যা ম্যাচের আগা-গোড়া একই ছন্দে খেলতে সহায়তা করে। উন্নতি হয়েছে সেটপিসে। রায়হান হাসান-বিশ্বনাথ ঘোষদের লম্বা থ্রো-ইন প্রতিপক্ষ রক্ষণে ত্রাস হয়ে দেখা দিচ্ছে।
ইংলিশ কোচের হাত ধরে চলমান উন্নতি দেশের ফুটবল সমর্থকদের নজর কেড়েছে। একসময় যারা বলতেন, এ দেশে ফুটবল দিয়ে কিছু হবে না। তারাই এখন সম্ভাবনার নতুন সিঁড়ি দেখছেন। দেশের ফুটবলারদের দৃষ্টিকাড়া নৈপুণ্যে খেলাটিকে ঘিরে বাড়ছে প্রত্যাশাও।
এ সম্পর্কে জেমি ডে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি মনি করি না খেলোয়াড়দের ওপর চাপ আছে কিংবা থাকবে। তারা ফুটবল উপভোগ করছে। গত ১৪ মাস আমরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছি। গত কয়েকটা ম্যাচে ছেলেদের নৈপুণ্য ছিল অসাধারণ। এ অবস্থায় ছেলেরা সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। আশা করছি, বাংলাদেশ দল এ ধারা অব্যাহত রাখবে, যা দেশের ফুটবলের গৌরব ফিরিয়ে আনবে।’
এ পর্যন্ত ১৫টি ম্যাচ খেলেছে জেমির বাংলাদেশ। তাতে জয় সাতটি। আর হার ছয়টিতে। বাকি দুটি ড্র হয়েছে। ম্যাচগুলোয় ১৩ গোল করা বাংলাদেশ হজম করেছে ১১টি। লাওস, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও ভুটান ছাড়া বাকি প্রতিপক্ষ দলগুলো ছিল ফিফা র্যাংকিংয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে। প্রতিপক্ষের তালিকায় ছিল কাতার, ফিলিপাইন, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান ও ভারতের নাম। কাতার দ্বৈরথের পর এ কোচ বলেছিলেন, বাংলাদেশের হয়ে এটাই আমার সেরা ম্যাচ। গতকাল বিমানবন্দরে পা রেখে জানালেন চারদিনেই সেরাটা বদলে গেছে, ‘কাতার ম্যাচের নৈপুণ্য বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আমার সেরা ছিল। এখন সেরার প্রশ্নে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই বলব।’ ঢাকায় পা রেখেও আক্ষেপ ছিল জেমির কণ্ঠে, ‘ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্ট প্রাপ্য ছিল। লিড নেয়ার পর একাধিক সুযোগ এসেছিল। তা কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা ওখানেই শেষ করে দেয়া যেত। কিন্তু এটাই ফুটবল, আপনাকে বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।’
অবশ্য এ সাফল্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে রাজি নন ফুটবলাররা। বর্তমান ফর্ম ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম, ‘আমাদের দলটা আগের চেয়ে অনেক ভারসাম্যপূর্ণ। বিশ্বনাথের জায়গায় রায়হান হাসান এসেছে, টুটুল হোসেন বাদশার জায়গা খেলেছে রিয়াদুল হাসান রাফি, সুফিলের জায়গা সাদ উদ্দিন। সবাই কিন্তু প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলে নিজেদের অবস্থান পাকা করে নিয়েছে। জাতীয় দলে এখন প্রচুর ব্যাকআপ খেলোয়াড় রয়েছে। এ অবস্থায় হাওয়ায় গা না ভাসিয়ে দলের অভ্যন্তরের এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাজে লাগিয়ে আমাদের ইতিবাচক অবস্থা ধরে রাখতে হবে।’ ভারতীয় সুপার লিগের ক্লাব অ্যাথলেটিকো ডি কলকাতার সাবেক এ মিডফিল্ডার যোগ করেন, ‘ম্যাচের পর আমাদের প্রতি কোচের বার্তা ছিল—এখনো অনেক জায়গায় উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সে জায়গাগুলোয় আমাদের উন্নতি করতে হবে। দলের সদস্যরাও তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ অবস্থায় সবার উচিত দলের পাশে এসে দাঁড়ানো।’