বিডিংয়ের অনুমোদন পাওয়ার আট মাসের মাথায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণ জানতে চেয়ে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির আইপিওতে না আসার সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে কমিশন। এজন্য এ বিষয়ে ইস্যু ব্যবস্থাপক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসে চিঠি পাওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেছে বিএসইসি।
বিএসইসির উপপরিচালক মো. ফারুক
হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে,
২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস
বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের জন্য কমিশনের
কাছে আবেদন করে। কোম্পানিটি গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড
এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫ অনুসারে আইপিওর জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ঘাটতি পূরণে কোম্পানিটির দুই বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, যোগ্য
বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে শেয়ারের কাট অফ প্রাইস (প্রান্তসীমা মূল্য) নির্ধারণে
এ বছরের ১৫ জানুয়ারি কমিশন কোম্পানিটিকে বিডিংয়ের অনুমতি দেয়। কিন্তু বিডিংয়ের
অনুমোদন পাওয়ার আট মাস পর এ বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস আইপিও
প্রত্যাহারের চিঠি পাঠায়, যা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে কেন বিডিংয়ের
অনুমোদনের আট মাস পর আইপিও প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার কারণ জানতে চেয়েছে কমিশন।
বিএসইসির একজন কর্মকর্তা বণিক
বার্তাকে বলেন, তাদের তহবিলের প্রয়োজন না থাকলে সেটি বিডিংয়ের অনুমোদন পাওয়ার আগেই
আমাদের জানাতে পারত। কিন্তু বিডিংয়ের অনুমোদন পাওয়ার আট মাস পর এসে তারা আইপিওতে
না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ আট মাসের মধ্যে এমন কী ঘটেছে যে তাদের আইপিওতে আসার
প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে, সেটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তাই আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে
চিঠি দিয়েছি।
বিএসইসির পক্ষ থেকে এ মাসের ৩ তারিখে
পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইস্যু ব্যবস্থাপক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট বরাবর চিঠি
ইস্যু করা হয়। চিঠিতে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিএলসি
ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
মনিরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, কমিশনের
কাছ থেকে আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে
আমাদের অবস্থান জানাব।
এর আগে পুঁজিবাজারে না আসার কারণ
হিসেবে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের কোম্পানি সচিব সফিউল আজম বণিক বার্তাকে
জানিয়েছিলেন, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্যই তারা পুঁজিবাজারে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু
আইপিও প্রক্রিয়া চলাকালীন নিজস্ব তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা
হয়েছে। ফলে এখন আর পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। এজন্য কোম্পানির
পর্ষদ বর্তমানে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পর্ষদের
কাছে দুটি বিকল্প ছিল। একটি হচ্ছে নিজস্ব উৎস থেকে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার পরও
পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা এবং আরেকটি হলো ভবিষ্যতে যখন প্রয়োজন হবে তখন
পুঁজিবাজারে আসা। পর্ষদ দ্বিতীয় বিকল্পটিই বেছে নিয়েছে।
এদিকে, ২০১৩ সালে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের
৩ কোটি ৪৭ লাখ ১৮ হাজার ৩০০টি বা ২৯ শতাংশ শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিদেশী প্রাইভেট
ইকুইটি ব্রামার ফ্রন্টিয়ার পিই
(মরিশাস)
লিমিটেড। সে সময় শেয়ারপ্রতি ৩৫ টাকা ৪৩ পয়সা
হিসেবে পপুলার ফার্মায় ১২৩ কোটি ৬৯ হাজার ৩৬৯ টাকা বিনিয়োগ করে প্রাইভেট ইকুইটি
প্রতিষ্ঠানটি। প্রাইভেট ইকুইটি বিনিয়োগের শর্তানুসারে, যে
কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয় সেটিকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর আইপিওতে আসতে হয়। মূলত
শেয়ার বিক্রি করে নিজেদের বিনিয়োগ উঠিয়ে নেয়ার জন্যই আইপিওতে আসার শর্ত থাকে।
পপুলার ফার্মা পুঁজিবাজারে না আসার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর শর্তানুসারে কোম্পানিটিতে
থাকা ব্রামার ফ্রন্টিয়ার পিই
(মরিশাস)
লিমিটেডের শেয়ার নিজেরা কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত
নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাস দুয়েক আগে ব্রামার ফ্রন্টিয়ার পিই (মরিশাস) লিমিটেডের
কাছ থেকে পপুলার ফার্মার ২৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান পপুলার
ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড।