বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য (বাল্ক) প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে টাকা ১৬ পয়সা করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। সে হিসেবে কমিটির পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে কিলোওয়াটপ্রতি টাকা ৯৯ পয়সা। বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৮ শতাংশ। এর আগে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)

মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ট্যারিফ পদ্ধতি অনুযায়ী বিপিডিবির রেট বেজের ওপর রিটার্ন বিবেচনায় সরকারি ভর্তুকি ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থ প্রয়োজন ৬৬ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য পড়ে টাকা ১৬ পয়সা। তবে বিপিডিবি বর্তমানে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ টাকা ১৭ পয়সায় বিক্রি করছে। কিলোওয়াটপ্রতি সংস্থাটির ঘাটতি থাকছে টাকা ৯৯ পয়সা। ঘাটতি পূরণের জন্য ভারিত গড়ে বিদ্যমান পাইকারি মূল্যহার ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানো প্রয়োজন। তবে সরকার ভর্তুকির পরিমাণ বিবেচনা করলে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার আবারো বিবেচনা করা যেতে পারে।

গণশুনানিতে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বিপিডিবির পাইকারি মূল্যহারে ডিমান্ড চার্জ আরোপের বিষয় উল্লেখ করে। সময় ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণের ভিত্তি এবং প্রস্তাবিত মূল্যহার সম্পর্কে বিপিডিবির সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবটি বিইআরসিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিতে বলেছে ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো। গণশুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক। সংস্থাটির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে জ্বালানির দামসহ নানা বিষয়ে অসংগতি রয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে আইপিপি থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়, ক্যাপাসিটি চার্জ এবং সরকারের কর শুল্কহার বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

গণশুনানিতে ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক . শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে দেখা যাচ্ছে, বিপিডিবির রাজস্ব ঘাটতি ৪০ হাজার কোটি টাকা। অযৌক্তিক ব্যয় বাড়ায় সংস্থাটির ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আর এটি সমন্বয় করতে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানিতে আসতে হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি একটি পরিস্থিতি। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারের একটি কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার জরুরিভাবে রাজস্ব আয়ের জন্য বিদ্যুতে হাজার কোটি টাকারও বেশি কর-শুল্কহার বাড়িয়ে ঘাটতি তৈরি করছে। বিদ্যুতের ধরনের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি এবং ব্যয় কমানো না গেলে অর্থনীতির ধ্বংস অনিবার্য। শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভীতি তৈরি হবে। বিদ্যুৎ জ্বালানিকে ঘিরে সরকারের রাজস্ব আহরণের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সেটি ধ্বংস টেনে আনবে। ব্যক্তি বেসরকারি খাতের স্বার্থরক্ষার জন্য আইপিপির বেশি মূল্যের বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। এসব জায়গায় যদি খরচ সাশ্রয়ের চিন্তা করা হতো, তাহলে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতো না, বরং ব্যয় সাশ্রয় হতো।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, কভিড মহামারী পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছে। অবস্থায় বিদ্যুতের মূল্য এক ধাপে এত বেশি বাড়ানো হলে তার ভুক্তভোগী হবেন ভোক্তারা। তাই একবারে এত বেশি দাম না বাড়িয়ে কয়েক ধাপে এটা করা যেতে পারে। মুহূর্তে ভোক্তার কথা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে দীর্ঘ মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি। বিইআরসির দ্রুত এসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো প্রয়োজন। তবে হুট করে এত মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বের কোথাও কখনো হয়নি। এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। গ্যাস সংকট অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সংকট কাটানোর জন্য বিইআরসির পরিকল্পনা দরকার। সেটি কোথায়?

সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া গণশুনানি চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। বিভিন্ন ভোক্তা অধিকার সংগঠন, বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এতে অংশগ্রহণ করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন